অণুগল্প : নারী স্বাধীনতা
মা এ কি শুনছি ! তুমি নাকি ফ্ল্যাট বেঁচে দিয়ে ওল্ড হোমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ ?
হ্যাঁ রে বাবুন, ঠিকই শুনেছিস। তোদের বাবার পুরোনো বন্ধু সনৎ বাবু সেদিন একটি ভালো বৃদ্ধাশ্রমের খবর দিয়েছেন। যত্নে রাখে ওরা। জায়গাটাও কাছেপিঠে। তোরা ইচ্ছে করলে এসে দেখা করতে পারবি মায়ের সাথে।
কিন্তু আমরা দুই ভাই থাকতে তুমি বৃদ্ধাশ্রমে যাবে মা ? লোকে কি বলবে !
দ্যাখ বাবা , আমার বয়স হয়েছে। এখন আর একাএকা সামলাতে পারিনা। তোদের বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে মানসিক ভাবেও বড্ডো একা হয়ে পড়েছি। তাছাড়া তোরা দুই ভাই আমায় পালা করে তোদের কাছে রাখতে চাস। আমার ওষুধ , জামাকাপড় সব নিয়েই তোদের মধ্যে চুলচেরা হিসেব। এই বয়সে ঘরের কাজও আর করতে পারিনা। বৌমারা ভাবে আমি শুধু বোঝা , বসে বসে সংসারের খরচ বাড়াচ্ছি। তাই ভেবে দেখলাম বাকি যেকদিন বাঁচবো ওই বৃদ্ধাশ্রমেই গিয়ে কাটাবো। ফ্ল্যাট টা বিক্রি করে যা পাওয়া যাবে তাতেই ওদের মাসে মাসে টাকা দেব। ফ্ল্যাট টা তো আমারই।
আমাদের সঙ্গে থাকতে কি সত্যিই তোমার এত কষ্ট হয় মা ? নাতি নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগেনা তোমার ? ওরা কিন্তু খুব ভালোবাসে ঠাম্মিকে।
জানি তো রে। তাইতো ছুটেছুটে যাই তোদের কাছে বারবার। তবে ওরাও এখন বড় হয়ে যাচ্ছে , বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ঠাম্মির সাথে বসেবসে গল্প করার সময় কোথায় ওদের ? তাছাড়া সারা জীবন ই তো পরের অধীন হয়ে কাটালাম। বাপের বাড়ি , স্বামীর ঘর , ছেলের সংসার ! এখন জীবন এর শেষ কটা দিন নাহয় একটু নিজের মতো কাটাই। মরার আগে অন্ততঃ স্বাধীন হই !
Originally published 4 years back, please enjoy.
Comment by dchaudhuri — November 4, 2024 @ 9:44 pm