দিলীপ চক্রবর্ত্তী
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে – পোপ কি ভাবে নির্বাচিত হন। এবার নির্বাচিত হবেন ২৬৭তম পোপ। এবারের নির্বাচন শুরু হইয়েছিল ৭ই মে, ২০২৫ । মেধা, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের ভিত্তিতেই একজন বিশপ এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেন।
পোপ্ নির্বাচনের জন্য ভ্যাটিক্যানের একটি বিশেষ গোপন মন্ত্রনাসভা (Conclave) আছে এবং সেখানেই নতুন পোপের নির্বাচিত হয়। গোপন মন্ত্রনা সভায় সারা পৃথিবীর রোমান ক্যাথলিক বিশপদের সম্মিলিত করা হয়। সম্মিলিত বিশপরা শতাব্দীরও বেশী প্রাচীন সিস্টিন চ্যাপেলএর একটি বিশেষ বন্ধ কক্ষে মিলিত হন। এ কক্ষের পোষাকী নাম হচ্ছে “কনক্লেভ”। এটি কয়েক শতাব্দীর পুরানো একটি কক্ষ। ১৩শত শতাব্দীতে পোপ গ্রেগরী-দশম কঠিন নিয়মের প্রচলন করেন, যাতে পোপ নির্বাচনে অযথা সময় নস্ট না হয়। কারণ তাঁর নিজের নির্বাচনে প্রায় তিন বৎসর সময় লেগেছিল। ভবিষ্যতে যাতে এর পু্নরাবৃত্তি না হয় সেজন্যই তিনি পোপ নির্বাচনের কঠোর নিয়মাবলী স্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালে পোপ জন পল-২ পোপ নির্বাচনে গোপনীয়তার উপর বিশেষ গুরূত্ব প্রদান করে পোপ নির্বাচনের নতুন পদ্ধতি স্থাপন করেন। উপস্থিত বিশপগণ এ বিশেষ কনক্লেভে মিলিত হন এবং সেখানে তাঁরা ধ্যান বা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের পোপকে নির্বাচন করেন। এখানে গোপনীয়তা অবশ্যম্ভাবী। এ নির্বাচনে বাইরের জগতের কোন প্রভাব যাতে না পরে সে জন্যই কঠোর গোপনীয়তার প্রবর্ত্তন করা হয়েছে।
সাধারণতঃ পোপের দেহান্তের ১৫ থেকে ২০ দিন পরে নতুন পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। পোপ নির্বাচনে কমপক্ষে দুই তৃতীংশ বা তার বেশী ভোট প্রাপ্তির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। যতদিন এ ব্যবধান না হবে ততদিন এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে, দিন, সপ্তাহ বা মাস হলেও এর কোন নড়চড় হবে না। ভোটের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কনক্লেভের সাথে বহির্জগতের সর্ব প্রকার সংযোগ বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়ে থাকে। জনসংযোগ সম্পুর্ণভাবে ছিন্ন করা হয়ে থাকে। এ নির্বাচনে যাঁরা অংশ গ্রহণ করেন তাঁদের প্রত্যেককেই গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নিতে হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। তারপর সেই চিমনি দিয়ে সাদা ধোঁয়া বের হলে বুঝতে হবে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়ে গেছেন। কালো এবং সাদা ধোঁয়ার মাধ্যমেই সারা পৃথিবী বুঝতে পারে যে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
ঠিক একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন পোপ লিও-১৪ মে মাসের ৮ তারিখে নির্বাচিত হয়েছেন। এই প্রথম একজন আমেরিকান খৃষ্টধর্মের পোপ নির্বাচিত হলেন। আমেরিকার শিকাগো শহরে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
পোপ সাধারণতঃ কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রদর্শন করেন না, তবে পোপ জন পল এবং পোপ ফ্রান্সিস বিভিন্ন সরকারের প্রতি তাঁরা যে খুশি ছিলেন না, প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন নি। এখন দেখা যাক নতুন পোপ তাঁর মতামত নিজের মধ্যেই রাখতে পারেন কি না। খৃষ্টধর্মের ধর্মগুরু ও ধর্মপিতা লিও-১৪র প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে আশা করছি – তিনি ধর্মে অসহিষ্ণুতার অবসান করতে সাহায্য করবেন।
উৎস – গুগল, ডেরিয়াস ভন জি স্পরযিনস্কি ও অন্যান্য।
Nice article in Bengali. Historian Frederic Baumgartner’s 2003 book Behind Locked Doors: A History of the Papal Elections, published by Palgrave Macmillan.M
Comment by Debabrata Chaudhuri — May 31, 2025 @ 10:18 pm