ইনকারসেরেটেড কৃষ্ণা চৌধূরী
নভেম্বরের মাঝামাঝি সাধারনতঃ 1st marking period এর রেজাল্ট বেরো্য। এইদিন স্কুল হাফছুটি হয় এবং প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের বাবা, মা বা অন্যান্য কোনো আত্মীয়স্বজনকে স্কুলে আসতে হয় রিপোর্ট কার্ড নেওয়ার জন্য। স্টুডেন্টদের হাতে রিপোর্ট কার্ড দেওয়া হয়না। সেদিন gymnasium এ সমস্ত টিচাররা টেবিল পাতে সারি সারি । নিজের নিজের স্টুডেন্টদের লিস্ট নিয়ে বসে তারপর parentরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে যায় এসে।
সেবছর এমনই এক November এর মাঝামাঝি আমরা সবাই gymএ নির্দ্দিস্ট টেবিলে গিয়ে বসেছি। বিরাট বড় gymএ চারিদিকে সব ডিপার্টমেন্টের টিচাররা বসেছে, বিরাট gymএর মাঝখানে গাদা গাদা চেয়ার সাজানো রয়েছে অভিভাবকদের বসবার জন্য।
আমি যখন ঢুকলাম দেখি আমার টেবিলে দুজন বসে রয়েছে, দেখেই চিনলাম Brittanyর বাবা মা। হেঁসে আপ্যায়ন করে নিজের চেয়ারটিতে বসলাম, রিপোর্ট কার্ডের বান্ডিল খুলে Brittanyর রিপোর্ট কার্ডটি তার বাবা মার হাতে তুলে দিলাম।
Brittany খুবই ভাল মেয়ে, সুতরাং তার তারিফ করা ছাড়া আর কিছু বলার ছিলনা আমার। এরপর একের পর এক বহু অভিভাবকদের সাথে মোলাকাত হল যা প্রত্যেক বছরেই হয়ে থাকে, এটা নতুন কিছু নয়।
লক্ষ্য করলাম এক ভদ্রমহিলা বেশ অনেকক্ষন ধরেই আমার টেবিলের উল্টোদিকে একটু দূরে চেয়ারে বসে আমার দিকেই এক দৃস্টিতে দেখছেন কিন্তু কাছে আসছেনও না কিছু বলছেনও না। প্রথম দিকে তেমন গা করিনি। ভাবলাম হয়তো নিজের ছেলে বা মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারপর কেমন যেন মনে হল বোধহয় আমার সঙ্গেই কথা বলতে চায়, তবু কিছু বললম না। বেলা ১টা থেকে রিপোর্ট কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে, এখন বাজে সাড়ে চারটে। ভদ্রমহিলা কিন্তু
২
নড়ছেনও না চড়ছেনও না ঠায় একভাবে চেয়ারে বসে রয়েছেন আমার দিকে তাকিয়ে। আর আধঘন্টা পরে আমাদের dinner break হবে, পাঁচটা থেকে ছ’টা। তারপরও সবাইকে একঘন্টা থাকতে হবে তবে দিনের কর্ম্ম শেষ হবে।
Dinner থেকে ফিরে এসে দেখি ভদ্রমহিলা সেইভাবেই বসে আছেন, পাশে একটি মেয়ে। ভাবলাম এই মেয়েটির জন্যই বোধহয় বসেছিলেন। Dinner এর পর ভীড় অনেক পাতলা, এই সময় আর বেশী লোকজন আসেনা কেননা তখন সকলেরই dinner time। সবাই উসখুস করছে, একে তো dinner খেয়ে সকলের ঘুম পেয়ে গেছে, তার ওপরে বেলা একটা থেকে ঠায় বসে বসে সবাই বাড়ী যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পরেছে। প্রায় সাড়ে ছটার সময় দেখি ভদ্রমহিলা মেয়েটিকে সঙ্গে করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি তাদের আপ্যায়ন করে বসতে বললাম। পাশের টেবিল থেকে সহকর্ম্মী Susan মেয়েটির দিকে হাত তুলে বলল, ‘Hi, Jessica’। বুঝলাম মেয়েটি Susanএর স্টুডেন্ট, তবে আমার কাছে কেন? কিছু প্রশ্ন করলাম না।
‘Hi, how are you Mrs. Chatterjee, I am Steven Hawkins’ mother’, ভদ্রমহিলা বললেন। ‘Steven Hawkins’?ঠিক মনে করতে পারলাম না। আমার কোনো ক্লাসেই তো Steven বলে কেউ নেই এবছর। রিপোর্ট কার্ডের বান্ডিল খুলে খুঁজতে লাগলাম। ভদ্রমহিলা বুঝতে পারলেন, বললেন, ‘Mrs Chatterjee, Steve graduated in 2003’, আমি একটু অবাক হলাম। তাহলে এতদিন পরে আমার কাছে কি প্রয়োজন?Jessicaও তো আমার student নয়। Steve যে কে সেটা মনে করতে পারলাম না কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করলাম না। আজকাল সকালে কি ব্রেকফাস্ট খাই তাও ভূলে যাই। জিজ্ঞাসা করলাম Steve এর কোনো ছবি আছে কিনা সঙ্গে। উনি পার্স থেকে একটি ছবি বার করলেন, দেখেই চিনতে পারলাম। ছোট্টখাট্ট চেহারার Steve আমার খুবই প্রিয় ছাত্র ছিল, পড়াশুনাতেও যেমন ভাল ছিল, ব্যবহারও ছিল তেমনি মিস্টি। আমাকে এক দিনের জন্যও বকতে হয়নি তাকে। ছবিটা দেখে তাকে ফেরত দিলাম, দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তা Steven কি করছে
৩
আজকাল। ভদ্রমহিলা কাঁদতে শুরু করলেন। আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম, Jessicaও চুপ করে রয়েছে। যেহেতু লোকজন কমে গেছে এবং Mrs. Hawkins gym এর দিকে পিছন ফিরে বসে আছেন আর অন্যান্য টিচাররাও একে অন্যের সাথে গল্পে মশগুল কেউই লক্ষ্য করলনা আমাদের দিকে। আমি একটি টিস্যু বার করে তার হাতে দিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে।
‘He has been incarcerated. There has never been a trial’.
‘সে কি’? আমি ভয়ানক আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম, ‘On what charges’?
‘Murder’. আমি প্রায় চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম, নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় আছে সে।
‘Pennsylvania’, বলে সেখানকার একটি জেলের নাম করল যা আমি জীবনেও শুনিনি। Mrs. Hawkins চোখ টোখ মুছে আমার দুহাত জড়িয়ে ধরে বলল, ‘Mrs. Chatterjee, Steve wants to see you’. আমি তো মহা ফাঁপরে পড়ে গেলাম। আমি কি করে Pennsylvania যাব? Mrs. Hawkins বোধহয় বুঝতে পারলেন আমার সমস্যা, বললেন, ‘don’t worry, we will take you there. Mrs. Chatterjee, Steve believes I repeat he wholeheartedly believes that you are the one that can help him’. আমাকে একটি কার্ড দিলেন, দেখলাম city office এ বেশ বড় position কাজ করেন। আমার address, phone number সব লিখে নিলেন, বললেন যেদিন আমি যেতে চাই সেদিনই নিয়ে যাবে তারা।
Intercom এ প্রিন্সিপ্যালের ঘোষনা শোনা গেল, সমস্ত অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য অনুরোধ। যাওয়ার আগে আবার আমার হাত দুটি ধরে আর একবার অনুনয় করল, ‘Mrs. Chatterjee, please help me, help Steve’. তাকে আশ্বাস দিয়ে বিদায় জানালাম কিন্তু নিজে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে পড়লাম।
৪
বাড়ী ফিরে খবরটা জানানো মাত্রই কর্ত্তা রেগে আগুন তেলে বেগুনের মতো জ্বলে উঠ্লেন কিন্তু ছেলেরা প্রচুর উত্সাহ দিল। এরপর স্কুল থেকে একদিন ছুটি নিয়ে গেলাম সেই Pennsylvaniaর জেলে Steveকে দেখতে। সকাল আটটার সময় বেরিয়ে প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ১২০ মাইল রাস্তা আমি, Jessica এবংMrs. Hawkins এই ডিসেম্বরের ঠান্ডার মধ্যে গাড়ী করে গেলাম। জীবনে এই প্রথম আমি জেলখানা দেখলাম। বিরাট গেট, দুপাশে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে, চারিদিকে উঁচু পাঁচিল barbed wire লাগানো। গেটের বাইরে দাঁড়ানো রক্ষীদের পরিচয় পত্র দেখানোর পর গেট খোলার permission পেতে বেশ কিছুক্ষন সময় লাগলো কারন সব পরিচয়পত্র scan করে রক্ষীরা পাঠালো ভেতরে, সেইসব ওপরওলাদেরকাছ থেকে verified হয়ে এল তবে গেট খোলার মেসিন চলল। বিরাট চওড়া cast iron গেট অল্প একটু ফাঁক হল, তার মধ্যে দিয়ে আমরা তিনজন ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকে দেখি বিরাট বড় কম্পাউন্ড, সেটা পেরোলাম, তারপর এ চত্বর, সে চত্বর, এই করিডর, সেই করিডর পেরিয়ে একটা বিরাট বড় হলঘরে ঢুকলাম। শুনলাম এখান থেকে রক্ষী এসে এক একজন করে prisoner দের কাছে নিয়ে যাবে। এখানে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর একজন এসে আবার পরিচয়পত্র দেখতে চাইল। এই নিয়ে চারবার পরিচয়পত্র দেখানো হল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম, অনেক লোক বসে রয়েছে সবাই নিজের নিজের লোকদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। খূনী, ডাকাত যাই হোক সবারই স্নেহ ভালোবাসার লোক আছে নিশ্চয়ই।
বেশ কিছুক্ষন পরে গার্ড এসে Mrs Hawkins কে ডাকল Steven এর সঙ্গে দেখা করানোর জন্য, আমিও উঠতে যাচ্ছিলাম কিন্তু লোকটি আমাকে বসিয়ে দিল, ‘one at a time please’ বলে। দশ মিনিট পরে Mrs. Hawkins ফিরে আসার পর গার্ড আমাকে নিতে এল। বলল, ‘ten minutes for the attendees’। এতটা রাস্তা এসে মাত্র দশ মিনিট? আবার একটা করিডর পেরিয়ে একটা ছোট ঘরে দেখি সারি সারি কাঁচ ঢাকা রেলের টিকিট কাউন্টারের মতো করা, ভেতর থেকে কয়েদীরা শুধু ফোন
৫
তুলে কথা বলতে পারে, তাদের দেখা যাচ্ছে কিন্তু ছোঁয়া যাবেনা আর কথা শোনা যাবে শুধু দুদিকে রাখা ফোন তুললে।
আমাকে গার্ড কাউন্টারের এপাশে রাখা একটা টুলে বসতে বলল, দেখি কাঁচের ওপাশে ছোট্ট চেহারার লোক বসে রয়েছে, মুখ দাড়ি গোঁফ ভর্ত্তি। আমাকে দেখেই হাত তুলে দেখালো ফোনটা তুলতে। ফোন তুলতেই একটা হেঁড়ে গলায় শুনতে পেলাম, ‘hallo, Mrs. Chatterjee how are you’? এটাই কি সেই Steve? আমার কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে, যে Steve কে আমি পড়িয়েছি তার সঙ্গে কোন মিলই খুঁজে পেলাম না। ‘Mrs. Chatterjee, I am excited, overwhelmed and utterly pleased to see you’. বলেই কাঁদতে শুরু করল তার মায়েরই মতো, ‘Mrs. Chatterjee, please help me to get out of this hell. I believe you are the only person that can help me’. আমারও চোখ শুকনো থাকল না। তার কথায় জানতে পারলাম সে কলেজে পড়াশুনো করার সময় পার্টটাইম bartender এর কাজ করত পড়াশুনোর কিছু খরচ তোলার জন্য। যেদিন ঘটনা ঘটে সেদিন মধ্যরাত্রে bar বন্ধ করে যাওয়ার মুখে চারজন drunkard ঝগড়া করতে করতে bar এ ঢুকল, ঢুকেই অর্ডার করল whiskeyর। Steve যখন জানালো বার বন্ধ হয়ে গেছে তখন তারা নিজেরাই ক্যাবিনেট খুলে বোতল বার করবার চেস্টা করল। Steve তথক্ষনাত পুলিশে ফোন করবার সঙ্গে সঙ্গে তারা তাকে মারতে ছুটে এল, একটা brawl শুরু হয়ে গেল। ওদের একজন তার দিকে ছুটে আসতেই সে সরে গিয়ে পালাতে গেল। পেছন দিক থেকেও আর একজন তাকে ছুরি মারবার জন্যে দৌড়ে আসছিল। Steve সরে যেতেই পেছনের লোকটার ছুরি সামনের লোকটার বুকে বিদ্ধ হয়ে যায় এবং তৎক্ষনাৎ তার মৃত্যু হয়। সমস্ত ঘটনাটা এত অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে গেল যা Steven এর কাছে এখনও বোধগম্য হচ্ছেনা। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে আসে, কিন্তু যখন পুলিশ রিপোর্ট বেরোল সবাই তাকেই খূনী সাব্যস্ত করল।
৬
পরের দিন ব্যাপারটা আমি principal কে জানালাম, তিনি খুব খুশী হলেন যে আমি Steveএর সঙ্গে দেখা করে এসেছি বলে। প্রথমতঃ সে আমাদের প্রাক্তন ছাত্র, দ্বিতীয়তঃ সে নির্দ্দোষ। এর পরের
কয়েকমাস আমাকে যা দৌড়োদৌড়ি করতে সে সব কাহিনী লিপিবদ্ধ করতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। Principal এর চিঠি নিয়ে district superintendent, mayor, councilmen এবং শেষ পর্য্যন্ত congressmen এর কাছে যেতে হল, যদিও প্রথম যোগাযোগগুলো উনিই করে দিলেন। অনেকে অনেকরকম ভাবেই সাহায্য করল কিন্তু মোটামুটি সব জায়গায় আমাকেই যেতে হল। কতদিন ধরে , কত ঘাট ঘুরে, কত কথা বলা বিভিন্ন লোকের সঙ্গে, কত চিঠি লেখা, কত ফোন করা ইত্যাদির মধ্যে, টালমাটালের মধ্যে দিয়ে গেল দিনগুলো। স্কুলের কাজ তাইবলে অব্যাহত রইল না। এই করতে করতে সামার এসে গেল, স্কুল বন্ধ হলো, আমিও সামারের ছুটি উপভোগ করবার জন্য উন্মুখ হয়ে রইলাম।
নতুন বছর শুরু হল সেপ্টেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর অবধি dancing with the wolf এর মতো দিন চলে। Thanksgiving থেকেই শুরু হয়ে যায় খ্রীষ্টমাসের দিন গোনা। সারাক্ষন লেগে রয়েছে নানারকম অনুষ্টান, বিভিন্ন জায়গায় class trip আর সেই ছুতোয় ছেলেমেয়েদের ক্লাস কামাই। খ্রীষ্টমাসের ছুটির দুদিন আগে হচ্ছে Alumni day. সেদিন স্কুল হাফ ছুটি হয়ে যায় কিন্তু বিরাট বড় অনুষ্টান। যেহেতু অডিটোরিয়াম সারানো হচ্ছে তাই এবছর gymnasium এই সব অনুষ্টান হবে। পুরোনো ছাত্রছাত্রীরা সব আসে, নাচ, গান, খানা পিনা, হৈচৈ চলে বাকী সময়টা।
আমিও খাতা পত্র ক্যাবিনেটে ঢুকিয়ে নীচে গেলাম, gymnasium ঢুকে দেখি DJর বাজনা তারস্বরে বাজছে। আমাদের সেখানে উপস্থিত থাকতেই হবে কারন ছেলেমেয়েদের তদারকি করতেই হবে সে যতই কানফাটানো আর মাথাধরানো music বাজুক। আমি ঢুকতেই কতকগুলো ছেলেমেয়ে হৈহৈ করে দৌড়ে এসে টানাটানি করে gym মাঝখানে যেখানে তারা dance floor তৈরী করেছে সেখানে নিয়ে গেল। যত বলি পায়ে ব্যথা নাচতে
১০
পারবোনা কে কার কথা শোনে। অতঃপর salsa, mumbo, cha cha cha, snake dance হ্যানা ত্যানা নানারকমের নাচ তাদের সঙ্গে নাচতে হলো। চারিদিকে সব হাতে তালি দিয়ে বাজনার সাথে সাথে,‘go,Mrs. Chatterjee, go Mrs. Chatterjee’ বলে সব cheer করছে। একদলের হাত থেকে ছাড়া পাই তো আর এক ধরে। বেশ কিছুক্ষন পরে তারা আমাকে ক্ষান্ত দিল। আমি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
‘Hallo, Mrs. Chatterjee’, বলে একটি ছেলে সামনে এসে দাঁড়ালো। Steven Hawkins, দেখেই চিনতে পারলাম দাড়ি গোঁফ কামানো মিষ্টি চেহারার Steve. আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম, তাহলে সে ছাড়া পেয়ে গেছে
জেল থেকে। ‘Hallo Steve, how are you’? ‘I am just fine, thank you’ বলে জড়িয়ে ধরে গালে একটি চুমো দিল। Gym এ কানফাটানো আওয়াজে তার একটা কথাও শুনতে পারছিলাম না। Steveকে সঙ্গে করে আমার ক্লাসরুমে নিয়ে যাবার আগে Susanকে বললাম কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমি কোথায় তাহলে বলবে আমার পায়ে ব্যথা করছে তাই ওপরে গেলাম। Susan মুচকি হেসে বলল, ‘your camaraderie is incredible’. ‘But, of course’, বলে আমি এগিয়ে গেলাম।
১১
ক্লাসরুমে ঢুকে Steve মন্তব্য করল, ‘it looks the same, hasn’t changed a bit except that the furnitures have been moved around’. আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবার ফুরসত না দিয়েই Steve আর একবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘it all happened because of you Mrs. Chatterjee’. ‘What happened’? আমি জানতে চাইলাম। ‘That I am released from the jail term, that I got the fair trial, got out of incarceration, all because of you’. Steve জানালো আমার
চেষ্টায় সে তার জীবন ফিরে পেয়েছে। আমি যে তার সঙ্গে দেখা করে, সমস্ত details নিয়ে কত লোকের সঙ্গে দেখা করে গাদা চিঠি লিখে কত important লোকের recommendation যোগার করে justice department এ পাঠিয়েছি যা তাকে নির্দ্দোষ সাব্যস্ত করতে সাহায্য করেছে এ আর কেউ তার জন্য করতনা। ‘Nobody would’ve done that for me Mrs. Chatterjee’. ‘How do you know’? আমি বললাম। ‘I know, I know, I asked my heart, you are the one and only. That’s why I told my mom to see you and nobody else’.
ছুটির ঘন্টা শোনা গেল। আরও দুচারটে কথার পর Steve বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। যাবার আগে তার হাতে ধরা একটি
১২
প্যাকেট আমাকে দিল, আরেকবার আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে একটি চুমো দিয়ে বেরিয়ে গেল। বাড়ী ফিরে রাত্রে শুতে যাবার আগে ভাবলাম দেখি প্যাকেটটা খুলি। কাল সকালে আর ঘুম থেকে সাতসকালে উঠতে হবেনা, একটু দেরী করে শুতে যাব। নিজের ঘরে গিয়ে প্যাকেটটা খুলে দেখি কি আছে, ভাবলাম একটা ছবির ফ্রেম হবে হয়তো। কিন্তু একি! এ যে আমারই মুখ হাতে আঁকা ফ্রেমের মধ্যে। ছবির আমাকে দেখে মনে হচ্ছে কি নিষ্পাপ একটি মুখ, জ্যোতি বেরোচ্ছে। এ কাকে এঁকেছে Steve? আমি নিশ্চয় জানি আমি এত নিষ্পাপ নই। ভারী আশ্চ্রর্য্য হয়ে গেলাম। এর আগে বহু Art majorএর ছেলেমেয়েরা আমার ছবি এঁকে উপহার দিয়েছে। Steve এর Art major ছিল স্কুলে কিন্তু এই ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমার মুখটা ঠিকই আছে, তার থেকে যে চমত্ কার স্বর্গীয় আভা বেরোচ্ছে সেটা তার কল্পনা। Steve কি আমাকে স্বর্গের দেবী ঠাউরালো? বুঝতে পারলাম আমার মধ্যে সে দেবীই দেখেছিলো যে তাকে ঐ নরককুন্ড থেকে উদ্ধার করবে। হঠাৎ চোখে জল এসে গেল। শৈশব ও কৈশোর মনে একবার যে ছাপ পড়ে সে আর কিছুতেই মোছা যায়না। সেই ১৪ বছরের Steve আমাকে যে চোখে দেখেছিলো সেটাই তার সারাজীবনের পাথেয় হয়ে রয়েছে। এজন্যই বলে ‘chilhood
১৩
memories haunt’. চোখের জল মুছে আর একবার ছবিটিকে ভাল করে নিরীক্ষন করে দেখলাম, ছবির তলায় ডানদিকের কোনে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা আছে ‘Steven Hawkins, Incarcerated in Pennsylvania
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment