গোষ্টভবন – একটি অসাধারন উপন্যাস কৃষ্ণা চৌধূরী মুখোপাধ্যায়
‘গোষ্ঠভবন’ একটি চমৎকার উপন্যাস। হ্যাঁ এটিকে একটি উপন্যাসই বলা যেতে পারে। বাংলা দেশের গ্রামীন সভ্যতার একটি উচ্চমানের বর্ননা যা পাঠকের মনে ভিন্ন ধরনের রেখাপাৎ করে। আমাদের শুধু আমাদের কেন সারা পৃথিবীতে সকল সভ্যতাই গ্রাম দেশ থেকেই উৎপত্তি হয়েছে। জমি হচ্ছে মানুষের অন্নদাতা।সেই জমির বুকে যারা ফসল ফলিয়ে সকলের মুখে অন্ন তুলে দেয় তাদের অবদান অনেক সভ্যতার অগ্রগতিতে। সেই অন্নদাতাগন প্রনম্য। মহাভারতে এর নজির আছে। পাণ্ডবদের যখন খাণ্ডবপ্রস্থে পাঠানো হয়েছিলো তখন পাঁচ ভাই মাতা কুন্তীকে নিয়ে সেখানে গমন করে এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যুধিষ্টিরের নেতৃত্যে সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে সেটাকে ইন্দ্রপ্রস্থে পরিনত করেছিলো। এই উপন্যাসটি পড়ে আমার সেই কথাই মনে হচ্ছিল।
গৃহকর্ত্তা সমস্ত পরিবারকে একত্র করে রেখেছিলেন, প্রতিটি মানুষের এবং প্রতিপালিত জীবজন্তুর সুখ সুবিধার ওপর নজর ছিল তাঁর। তিনি যে গৃহ নির্ম্মিত করেছিলেন সেটা শুধু পরিবারের লোকদের জন্যই নয়,সমস্ত আশ্রিত লোকজন এবং গৃহপালিত জীবজন্তুর জন্যও। বাড়ীতে সব মানুষের সঙ্গে সকল মানুষের সমঝোতা ছিল এবং ছোটখাটো মনমালিন্যের কথা বাদ দিলে একটা সন্মানজনক সম্পর্কের আভাষ পাওয়া যায়।
সকল যৌথ পরিবারের পরিকাঠামো প্রায় একইরকম হয়ে থাকে। জমিতে ফসল ফলিয়ে নিজেদের জন্য সারাবছরের খাবার সশ্য ঘরে মজুদ রেখে উদবৃত্ত অংশ্ বিক্রয় করে সংসারের অন্যান্য খরচ চালানো হয় কিন্তু তাতে বিলাসিতা করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে সংসারে যখন অনেক মানুষকে অন্নবস্ত্রের যোগান দিতে হয়। পরিবারের সকল মানুষকে একত্র করে রাখা খুব সহজ ব্যাপার নয় কিন্তু গৃহকর্ত্তা এবং গৃহকত্রীর যে শুধু যে মানসিক উদারতার পরিচয় পাওয়া গেছে তা নয় ওনারা ধৈর্্যের পরীক্ষাও দিয়েছেন এবং সেগুলি গল্পের মধ্যে অতিশয় সহজ সরল অথচ মনছোয়া ভাষায় লিখিত হয়েছে।
এই গল্পটি যদি কোনো চলচ্চিত্র পরিচালক গোষ্টির চোখে পরে এবং তারা যদি মনে করেন এটিকে একটি ছবি তৈরী করবেন তাহলে আমার ধারনা এটি সিনেমা জগতে অসম্ভব আলোড়ন তুলবে। এরকম ছবি আর কোথাও হয়নি। এই গল্পের লেখক লেখিকাদের জন্য আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment