বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীশেখ হাসি না ও তাঁর বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগ শাসিত বাংলা দেশ সরকারের পতন হল গত সোমবার(৮/৫/২০২৪)। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। প্রথমে তিনি ভারতের আগরতলা যান, পরে দিল্লীতে। যতদিন নেতারা দেশের প্রধান থাকে, ততদিন তাদের সাথে দেশের বিদেশের নেতাদের সাথে বন্ধুত্ব থাকে, একবার ভাবুন দেশছাড়া ইরানের শাহ থেকে শুরু করে ইদি আমিন পর্যন্ত সকলেই কোন না কোন দেশে আশ্রয় পেয়েছে, আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনাও গোপন আশ্রয় পাবেন কোন দেশে, তাঁর টাকার অভাব নেই, জীবনের বাকী দিনগুলি তাঁর ভালোই কাটবে বলে আমার বিশ্বাস। জীবনের বাকী দিনগুলি হয়ত তাঁকে এটা ভেবেই কাটাতে হবে যে কি ভুল হয়েছিল যার জন্য তাঁকে বাংলাদেশ ছাড়তে হল। পাঠকদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন – কোন প্রকৃত দেশপ্রেমী কি দেশ ছেড়ে চলে যায় বা পালিয়ে যায়?
বাংলাদেশ তো হাসিনাহীন হল। কিন্তু কেন? কেউ কেউ বলছে – এটা আমেরিকার চক্রান্ত, কেঊ বলছে – চীন করেছে, কেঊ বলছে – সবটাই ভারতের চক্রান্ত। কেঊই কিন্তু উগ্র মৌলবাদী মুসলিমদের কথা বলছে না। আমার মনে হয় – বিরোধী দল বি এন পি ও জামাত-ই-ইসলামের হাত আছে এর পিছনে। শেখ হাসিনা তো গেল, কিন্তু তারপর কি হবে? বাংলা দেশের মানুষ কি স্বাধীনতা পেল নতুন করে? আমার মতে বাংলাদেশীরা মোটেও নতুন করে স্বাধীন হল না। তারা নতুন করে আরেক অত্যাচারী শাসকের অধীনে এল। আর এ অত্যাচারীর রূপ অতি ভয়ংকর। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তানের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ভারতের সাহায্যে, বাংলাদেশের মানুষ মুজিবের হাত ধরে স্বাধীন হতে চেয়েছিল, কিন্তু মুজিব কি সকল বাংলাদেশিদের স্বাধীনতা দিতে পেরেছিলেন? বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক, বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হল-
তারপরের ইতিহাস কারো অজানা নয়, একদল সেনার উত্থানে মুজিবুর নিহত হলেন, এ সময় বি এন পির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব বাংলাদেশকে আরও বেশী করে মৌলিক ও সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। সেই সময় থেকেই বাংলাদেশ একটু একটু করে মৌলবাদী ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যেতে থাকে। যে কোন ধরনের রাজনৈতিক প্রতিবাদের আঙ্গিনায় হিন্দু নির্যাতন বা বিতাড়ন হয়ে উঠল বাংলাদেশের রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হিন্দু বিরোধী মৌলবাদী ইসলামিক সংগঠনগুলি হয়ে উঠল কট্টর ধর্মীয় অনুশাসনের বিধায়ক, ফলে রাজনৈতিক শাসন ও শাসকের বন্ধন শিথিল হয়ে গেল। ফলতঃ যা হওয়ার সেটাই হল, বাংলাদেশ হয়ে উঠল গেল কট্টর মৌলবাদী সংগঠন প্রসবের আতুর ঘর। হিন্দুর নির্যাতন আর দরিদ্র মুসলমান আস্তে আস্তে হয়েছে মৌলবাদীদের হাতের শিকার। বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে হিন্দুরা এমনিতেই ছিল অপাঙতেয়, আর দরিদ্র মুসলিম সমাজ যখন মৌলবাদী ইসলামের নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে ঐসলামিক স্বৈরাচারের শৃংখলে আবদ্ধ হচ্ছিল তখন শেখ হাসিনা মৌলবাদের শক্তি যে কত ভয়ংকর ও নৃশংস হতে পারে বুঝতে পারেননি, তারফলে যা হওয়ার সেটাই হল, গণতন্ত্রের হল হত্যা আর ইসলামী স্বৈরতন্ত্রের হল উত্থান, এর ফল বাংলাদেশের মানুষ একদিন হাড়ে হাড়ে বুঝবে, এখন স্বাধীন বাংলাদেশের গলাতে হয়ত বাঁধা হল অত্যাচারী মৌলবাদ, হয়ত বা পড়ল আফগানিস্তানের স্টাইলে তালিবানি অত্যাচারের ফাঁস। এর সঠিক উত্তর একমাত্র সময়ই দেবে।
আজ অনেকেই শংকিত জামাত-ই-ইসলামী হয়ত বাংলাদেশেও “শারিয়া নীতি” আরোপে প্রয়াসী হবে। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল মৌলবাদী জামাত-ই-ইসলামের বিরুদ্ধাচরনের সাহস দেখাতে পারবে বলে মনে হয় না। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত বাংলা দেশের জন্য এটাই অপেক্ষা করছে। তাছাড়া বি এন পি জামাতের বিরুদ্ধে যাবে বলে মনে হয় না কারণ জামাতের সাহায্যেই ব এন পি নেত্রী খালেদা জিয়া গৃহবন্দী থেকে মুক্তি পেয়েছেন। জামাত অথবা বি এন পি মনে হয় একই মুদ্রার দুই পিঠ, যারাই ক্ষমতায় আসুক বা থাকুক না কেন, হিন্দুদের প্রতি অত্যাচার বাড়বে বৈ কমবে না। বাংলদেশের নতুন প্রধান মুহম্মদ ইউনুসের ব্যাঙ্ক চালানোর অভিজ্ঞতা আছে, সেটা দিয়ে নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্র চালাতে পারবেন কি? তাঁর নেতৃত্বে হিন্দুরা সুরক্ষিত থাকবে কি? একমাত্র সময়ই এর উত্তর দিতে পারবে। শপথ গ্রহণের সাথে সাথে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছেন – কারণ ভারত বাংলা দেশের “বর্তমান আন্দোলনকে” বাংলাদেশের “আভ্যন্তরীন ব্যপার” আখ্যা দিয়েছিল। শুরুতেই ভারতের বিরুদ্ধাচরন মনে হয় মুহ ইউনূসের মধ্যে কূটনৈতিক দুর্বলতার নিদর্শন প্রকাশ করেছে মাত্র।
আর বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র অপেক্ষা “জামাত’ বেশী ছিল, বস্তুতঃ জামাতই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেখা যাক ইউনূস সরকার বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করতে পারে কি না, যে গণতন্ত্র হিন্দু মুসলমানদের সমান নাগরিক অধিকার দেবে। বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বাগতঃ জানিয়ে হিন্দুদের রক্ষা করার কথাও বলেন – ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর একটা কথা, অন্তরর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রদের, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের, কিন্ত সে সরকারের হয়ে ভারতকে হুমকি দিচ্ছে রাজনৈতিক দল বি এন পি, এ প্রশ্নের উত্তর আগামী নির্বাচন ঘোষণার সাথে সাথেই বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারবে। আশাকরি জামাতের অনুশাসনে “বাংলাদেশ” “ইসলামিক বাংলাস্তান” হয়ে যাবে কি না সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবেনা।
Nice article, not political, not fact-checked. View of the writer.
Comment by dchaudhuri — August 18, 2024 @ 10:18 pm