শ্রীচরণেষু মা,
তোমার পুজোর দিন আবার চলে এল। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে তুমি নিশ্চয় বাপের বাড়ী আসবে বলে উত্তেজিত । আজকাল ছোটাছুটির যা জমানা পড়েছে,বহু ছেলে-মেয়েরাই বিয়ের পর এমন নিয়ম করে বাপের বাড়ী আসতে পারে না । নিজের immediate family নিয়েই সবাই ব্যস্ত, তবে তুমি সত্যিই দারুন সংসার manage করছো। প্রত্যেক বছর Almost same সময়ে তুমি ৪-৫ দিনের জন্য একদম ঠিক চলে আসো, হয়ত মানুষের হাতে বাধা বলেই দেবতা হয়েও তুমি এমনটা আসতে পারো। যাই হোক, কেন তোমায় এই চিঠি লিখছি আগে সেটা
জানাই। Actually মনের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন বা আজগুবি কথা জমে আছে, আর তাতে আমি ঘেঁটে ‘ঘ’। তবে কাউকে জিজ্ঞাসা করার বা বলার মত পাচ্ছি না, জিজ্ঞাসা করলে জানি আমাকে আঁতেল ভেবে কাঁচা খিস্তি দেবে। তা ভাবলাম তুমি দেবতা, সবজান্তা, যদি হদিস্ দাও। তাই জানাচ্ছি। তবে মা আামি অতি সাধারণ মানুষ, একটু সাধারণ ভাবে উত্তর দিও – পুণর্জন্ম, আত্মা, বেদ-বেদান্তের শ্লোক বললে বড্ড ট্যান হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, তোমাকে Facebook আর tweeter-এ খুঁজেছিলাম, পাই নি। সাধারণ মানুষ আমি, তাই স্বর্গে যাবার ক্ষমতাও নেই। তাই ভাবলাম যখন মর্ত্যে আসবে, বাপের বাড়ীর পাড়ার লোক আমি। এই চিঠি যদি কোনো ভাবে পাঠাতে পারি আর যদি তোমার busy schedule-এর মধ্যে একটু সময় দাও, তো উত্তর পাবো। তবে চাপ নিও না, উত্তর না দিলেও ক্ষতি নেই । আর উত্তরের জন্য তোমার হাত বাধা কিনা জানি না।
আমার ধারাভাষ্য শুরুর আগে জিজ্ঞাসা করি তোমার শ্বশুড় বাড়ীর সব ভালো তো! আমার কেন জানি না মনে হয় তোমাদের স্বর্গে কোনো improvement হচ্ছে না। জানি না ওখানে democracy চলে না autocracy। আচ্ছা দেবলোকে কি লিঙ্গ-বৈষম্য আছে? ওখানে কি সবার স্বাধীনতা সমান? আজকাল কি অসুরদের সত্যিই শাস্তি হয় ওখানে? সত্যিই কি তোমরা সব update ঠিক্-ঠাক্ পাও? আমার ধারণা, স্বর্গের communication system টা বড্ড dated। তার ওপর China’র মতো দেবলোকের ভেতরকার খবর বাইরে বেরোয় না খুব একটা। তবে এটা হয়ত জানো মা, আমাদের এখানে communication বা overall technology’র গুচ্ছ progress হচ্ছে। মানছি almost free talk time আর data use করে চারিদিকে ভাটও exponentially বাড়চ্ছে তবে tech explosion মর্ত্যে বোধহয় much better। বলতে পারো tech চচ্চড়ি হচ্ছে প্রতিদিন। এ ব্যাপারে যখন কথা উঠলই তখন বলি – তোমরা কি জানতে AI (Artificial Intelligence) এরকম দানবিয় ভাবে আসবে যাতে দেবতা মানুষের বা machine-এর পেছনে চলে যেতে পারে? এখানে ধর্ম টেনো না please। যেকোনো রং-য়ের পোশাকের গোঁড়া ধার্মিকরা, যারা মনে করে তাদের ধর্ম অন্যদের থেকে বড়, তারা সবাই বজ্জাত। জানি তারা কেউ আমার এই চিঠি পড়লে রে-রে করে মারতে আসবে। এই তাদের জন্যই পৃথিবীতে ধর্মের নামে কোটি লোক মারা গেছে যদিও ধর্মের উদ্দেশ্য মিলন, ভাঙ্গন বা মৃত্যু নয়।
Anyway যেটা বলছিলাম – দেবতাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বলে দাবী করা হত তার অন্যতম কারণ তারা নাকি প্রাণ সৃষ্টি করে। AI তো computer-এর মাধ্যমে যুক্তি-বিশ্লেষণেই মানুষকে ছাড়াচ্ছে না বা অনুভূতি, consciousness-এর জগতেই পা রাখছে না, তারা ক্রমাগত অজৈব computer-এর দ্বারা জৈব পদার্থের সমস্ত গুণ সৃষ্টি করতে চলেছে। তবে তখন তোমাদের কি হবে মা? যদি এমন সত্যিই হয়, তখন মানুষ কি নিজেদের রক্ষা করতে তোমাদের স্মরণে রাখবে? আমার তো আজও মনে হয় অধিকাংশ মানুষ তোমাদের ভক্তি করে ভয়ে বা লোভে, ভালোবাসা বা শ্রদ্ধায় নয়। আর জমানা টাই তে give and take-এর।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য। কথাটা কি ঠিক? আবার এটাও শুনেছি আমরা, মানুষেরা, নিমিত্ত মাত্র। আমরা কিছুই করি না, ভগবান ই সব করিয়ে নেন। এতে আরও ঘেঁটে যাই। তার মানে কি খারাপ ভালো সবই তুমি করিয়ে নাও আর খারাপ কিছু হলে সেটাও হয় মঙ্গলের জন্য। তাহলে আমরা তো জড় ভরত। আর অন্য দিকে ভালো-মন্দ সব কিছুর মূলে যখন তোমরা, তখন ফলটা কেন আমরা পাই? আমার মনে আছে তখন আমি বেশ ছোটো, আমাদের কোয়ার্টারের ওপরের কোয়ার্টারে থাকতো এক দাদা। ১৮ বছর বয়সে জ্বরে পরে কিছুদিনের মধ্যে মারা যায়। কাকু-কাকিমা, মানে দাদার বাবা-মা, প্রত্যেক বছর ধুম-ধাম করে ঠাকুর পুজো করত। কাকু নাকি প্রায়ই বলত ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য।। দাদা যখন মারা যায়, কাকিমা প্রশ্ন করেছিল এটা কার বা কিরকম মঙ্গলের জন্য ভগবান করল? জানি না মা তোমার কাছেও এর কোনো সদুত্তর আছে কিনা না কি এগুলো তোমার system-এর bug। দেখো মা, খোলাখুলি বলি, রাগ কোরো না – রাগ করলে রাজনীতির দিদি-দাদাদের সাথে তোমার পার্থক্য কোথায়! পারলে বুঝিয়ে দাও। তোমার ওপর আমার রাগ হয় না যখন দেখি কেউ facebook-এ নিজেকে বেশী ক্ষমতাশালী বা সুখী দেখাচ্ছে কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা খোলোস দেখায়, original মানুষটাকে নয়। আবার খান সাহেবের বখাটে ছেলে পাঁঠা হলেও তার yacht আছে, সে porshe করে ঘুরে বেড়ায় আর আমার থেকে অনেক বেশী মেধাবী উজ্জ্বল অভাবের জন্য বেশী দূর যেতে পারেনি। সেখানেও তোমার ওপর বেশী রাগ হয় না কারণ সেটা কপাল বা
ভাগ্য বলে মানতে পারি যেখানে হয়ত fairness maintain করতে তুমিও অপারগ। আবার প্রত্যেক মানুষের জীবনে দুঃখ, কষ্ট, পতন,রোগ, মৃত্যু আছে, এগুলো জীবনের অঙ্গ বলেই মনে হয়। সেখানেও তোমার ওপর রাগ-অভিমান হয় না। কিন্তু যখন অসহায় নির্ভয়াদের ওপর অত্যাচার হয় বা লক্ষ- লক্ষ সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা আত্মসাৎ করে মানুষরূপী ক্ষমতাশালী অসুরগুলো আমাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় বা অসংখ্য মেধাবী ছাএ-ছাএীদের বঞ্চিত করে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে চুল্লীতে তুলে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর অশিক্ষা বেপরোয়া ভাবে চলে তখন পশুত্ব, দুর্নীতি, মনুষ্যত্বের চরম অভাব বড্ড প্রকট হয়। দেশের ধারক-বহকরা যখন হিটলার, বিচার ব্যবস্থা যখন শামুকের গতিতে চলে তখন সত্যিই ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছবির সেই গানের কথা মনে হয়, মনে হয় তুমি এসে ‘শেষ করে দাও এই অনাচার’। সেখানে তুমি ED হয়ে এসো, বিচারক হয়ে এসো কিংবা ফিল্মি style-এ বজ্রনিনাদ করে এসো, এসে বাচাঁও সমাজকে। তুমিই যদি মনুষ্যত্বের, ন্যূনতম আদর্শের, নীতির পথ না দেখাও, আমার মত সাধারণ মানুষদের দোষ দিয়ে কি লাভ! তাদের অধিকাংশের নীতির ভীত তো আজকের অধিকংশ রাজনীতিকদের আদর্শের মত – বুদ্ধ থেকে রাস্তা পরিবর্তন করে মানুষ কালীঘাটের আশ্রয় হয়ে রামমুখী, তবু স্বস্তি নই। ধর্ম, দেশ, রাজনীতির রং নির্বিশষে তুমি এসে কেন এর প্রতিকার করো না? Otherwise আগেকার অসুর-রা যেমন শিবভক্ত ছিল, আজকের অসুর-রা কোটি-কোটি টাকার প্যান্ডেল-লাইটে তোমাকে ৪-৫ দিনের জন্য চমকে দেবে আর বছরের বাকী দিনগুলোয় সাধারণ মানুষদের ক্ষত করে হাজার হাজার কোটি টাকা নিজেদের পকেটে, ফ্ল্যাটে বা account-এ ঢোকাবে। তোমার কৃপা কার ওপর বেশী বোঝা দায় মা!
শেষে বলি তুমি মা বলেই এত ক্ষোভ, আজগুবি সব প্রশ্ন খিল্লি করে উগড়ে দিলাম। তবে জানি না তুমি কেমন আছো। তুমি দশভূজা হওয়া স্বত্ত্বেও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকার পেছনেও কোনো কারণ থাকতে পারে। সবাই তো আমরা নিজেদের সমস্যার প্রতিকার চাই তোমার থেকে। বিনিময়ে কতজনই বা কিছু দিই তোমাকে। হাজার হাজার বছর ধরে শুধু চেয়ে এসেছি কিন্তু হয়ত তুমিও অনেক কষ্টে আছো, হয়ত আজ তোমারও কোনো সাহায্যের দরকার। দেবতা-মানুষের দূরত্ব এত বেশী যে জানি না তোমার কষ্ট কত বা তোমার ক্ষমতা
আজ কতটুকু। পারলে জানিও, পারলে নিশ্চয় চেষ্টা করব। তবে আজকের ultra tech savvy, superficial, extravagant যুগে,ধর্ম বা কেতাবী কিছুর দরকার নেই, বড্ড দরকার সেই অতি পুরোনো, গাঁইয়া জিনিসগুলোর – মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ব, সাধরণ নীতিবোধ, মানবিকতা, একটু আদর্শ। জানি না পাপ-পূন্য বলে সত্যিই কিছু হয় কি না কিন্তু তোমার ভূবনে আজ মাগো সত্যিই বডড পাপ মনে হয়, তাই দরকার তোমাকে। কিছুটা অসহায় হয়েই তোমাকে জানাচ্ছি। পারলে তাড়াতাড়ি প্রতিকার কোরো।
ভালো থেকো। আর হ্যাঁ, তোমার account থাকলে শ্বশুড়বাড়ী return করে আমার message-টা family and friend circle-এ tweet করে দিও। Time for action মা!
ইতি
তোমার কোটি কোটি সন্তানের একজন
সুমন কুমার চন্দ্র
BEC EE’98
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment