মাম্বা হোটেল প্রাংগনে – একটি ছোট গল্প
ইব্রাহিম ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে ক্রাচে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে মাম্বা হোটেল চত্তরের শেষ প্রান্তে একটা বড় বট গাছের ছায়ায় – রোজই দিনের শেষে। এখান থেকে তার বাসস্থান বেশী দূরে নয়। হাঁটা পথে। দুস্থদের জন্য তৈরী একটি বস্তি এলাকায় তার বাস।
লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ায় মাম্বা হোটেল আর সংলগ্ন রেস্তোরাঁ খুব পশ এবং জনপ্রিয়। স্থানীয় এবং বিদেশী বিত্তবানরাএখানেই জটলা করে। এই রেস্তোরাঁর একটা বিশেষ রীতি হল অতিথিরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের অবশিষ্ট খাওয়া বেঁধে নিয়েবেরোনো – হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে-থাকা ভিখারিদের জন্য। এই রীতির আকর্ষণেই ইব্রাহিম এই জায়গাটা বেছে নিয়েছে ভিক্ষাকরার জন্য।
লাইবেরিয়ার দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ যখন শুরু হওয়ার মুখে তখন ইব্রাহিম হাইস্কুল শেষ করেছে দেশ জুড়ে তখন সরকারের বিরুদ্ধেবিরোধিতার উত্তেজনা। মায়ের জোর আপত্তি সত্ত্বেও বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ল ইব্রাহিম। এক বিদ্রাহী সংস্থার সংগে যোগ দিল। মাপ্রথম গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে ছেলেকে বলেছিল, ‘এই বিদ্রোহ শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। কলেজ শেষ করেও যাওয়ারঅনেক সুযোগ পাবি’।কিন্তু মায়ের কথার চেয়েও বিদ্রোহের চ্যালেন্জ্-এর উত্তেজনা অনেক বেশী। ছেলেকে আটকে রাখতে পারল না।
ছ’মাস কেটে গেল। ছেলের কাছ থেকে কোন খবর না পেয়ে মা খুবই চিন্তুত হয়ে পড়ল। খবর নেওয়ার কোন উপায়ও দেখতেপেল না। চারদিকে প্রচন্ড অরাজকতা। নিদারুণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।দিনরাত রেডিওতে মৃত্যুর খবরে মায়ের শরীর শীর্ণ থেকেশীর্ণতর হয়ে চলেছে।
এইভাবে আরও ছ’মাস কেটে গেল। দ্বিতীয় যুদ্ধের ভয়াবহতা অনেকটাই কমেছে। শীর্ণতা সত্বেও মা ছেলের খবরের জন্যউৎগ্রীব। কয়েকদিনের মধ্যেই খবর পেল ইব্রাহিম ফিরে এসেছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার আগেই জানতে পারল সে এখনহাসপাতালে। যুদ্ধে আহত – একটি পায়ের নীচের অর্ধেকাংশ কেটে বাদ দিতে হবে। মা খুবই মুষড়ে পড়ল। পাড়া-পড়শীরাসমবেদনা জানাতে আসল।
ইব্রাহিমকে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে পড়ে থাকতে হল। তিন মাসের পরে যখন বেরোল, তখন ক্রাচে ভর করে চলা শিখতে হল।
দুর্দশা কখনও একা আসে না। পয়সা আয় করার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। পরিশ্রমসাধ্য কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।দেশের নিদারুণ অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য অল্প পরিশ্রমের কাজ পাওয়াও দুরুহ হয়ে দাঁড়াল অবশেষে ইব্রাহিম ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হল।
ছেলের এই নিদারুণ পরিণতি মাকে তীরের মত বিদ্ধ করল। মুর্ছা গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। মায়ের শীর্ণ নশ্বর দেহটি আর উঠল না।।
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment