অহনা চক্রবর্ত্তী
ভারতবর্ষ রত্নপ্রসবিনী, ভারতমাতার ঊজ্জ্বল রত্ন স্বামী বিবেকানন্দ, তাঁরই চোখ দিয়ে আমরা ভারতবর্ষকে দেখি, উচ্চ আদর্শের সঙ্গে পরিচিত হই, তিনিই সেই মহামানব যিনি করলেন কর্ম্মবাদের ওপর ভিত্তি করে মানবতার জয়গান। নিষ্কাম কর্ম্ম-ঈশ্বরলাভের বাস্তব পথ, কোনও কাজই তুচ্ছ নয়, সব কর্ম্মই সক্ষেত্রে মহান।
কর্মণ্যেবাধিকারম্ভে মা ফলেষু কদাচন।
মা কর্মফলহেতুভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি।।
অর্থঃ কর্মে তোমার অধিকার, তাহার ফলে তোমার অধিকার নাই, তুমি কর্মফলের হেতু হইওনা এবং সকাম কর্মে যেন তোমার আসক্তি না হয়- গীতা (২/৪৭)।
প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য নিজের নিজের আদর্শ জীবনে পরিণত করতে চেষ্টা করা। অপর ব্যক্তির আদর্শ নিয়ে তদনুসারে জীবন গঠনের চেষ্টা করার থেকে এটি অপেক্ষাকৃত নিশ্চিত উপায়। সমাজে সব নরনারীর মন একরকম নয়; সবার ধারণাশক্তি বা কর্মশক্তিও এক নয়। তাদের আদর্শের কোনোটিকেই অবজ্ঞা করা যায় না। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ আদর্শে পৌঁছাবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। আমাকে তোমার বা তোমাকে আমার আদর্শের দ্বারা বিচার করা ঠিক নয়। কিন্তু সচরাচর আমরা এমনটিই করে থাকি। বহুত্বের মধ্যে একত্বই সৃষ্টির পরিকল্পিত নিয়ম, ব্যক্তিগতভাবে নরনারীর মধ্যে প্রভেদ থাকলেও পশ্চাতে সেই একত্ব রয়েছে।
বিভিন্ন চরিত্র ও শ্রেনীর নরনারী সৃষ্টি – নিয়মের বৈচিত্র মাত্র। তাই সকলকে একই আদর্শ দ্বারা বিচার করা ঠিক নয়। এরূপ কর্মপ্রণালী অস্বাভাবিক সংগ্রাম সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করে এবং তার ধার্মিক ও সৎ হবার পক্ষে বিশেষ বাধা উপস্থিত হয়। আমাদের কর্তব্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার সর্ব্বোচ্চ আদর্শানুসারে চলবার চেষ্টায় উৎসাহিত করা এবং সেই আদর্শ সত্যের যতটা
২
নিকটবর্ত্তী হয় তার জন্য চেষ্টা করা। হিন্দুশাস্ত্র মতে মানব সাধারণের ধর্ম ব্যতীত প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে বিশেষ বিশেষ কর্ত্তব্য আছে। হিন্দুকে প্রথমে ব্রহ্মচর্্য্যাশ্রমে ছাত্ররূপে জীবন আরম্ভ করতে হয়, তারপর বিবাহ করে গৃহী হতে হয়; বৃদ্ধাবস্থায় গৃহাশ্রম থেকে অবসর গ্রহণ করে এবং সর্ব্বশেষে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়। বিভিন্ন আশ্রম অনুসারে জীবনের প্রত্যেক স্তরে বিভিন্ন কর্ত্তব্য উপদিষ্ট হয়েছে এই আশ্রমগুলির মধ্যে কোনওটিই অপরটি হতে বড় নয়। যিনি বিবাহ না করে ধর্মকার্্য্যে জীবনযাপন করেছেন তার জীবন যতটা মহৎ, বিবাহিত ব্যক্তির জীবনও ততটাই মহৎ। সংসারী অপেক্ষা সংসারত্যাগী মহত্তর একথা বলা বৃথা। সংসার ত্যাগের তুলনায় সংসারে থেকে ঈশ্বরের উপাসনা অনেক কঠিন কাজ।
তস্মাদসক্তঃ সততং কার্্য্যং কর্ম সমাচর।
অসক্ত হ্যাচরণ কর্ম পরমাপ্নোতি পুরূষঃ।
অর্থঃ অতএব তুমি আসক্তির হিত হয়ে সতত কর্তব্য কর্ম অনুষ্টান কর, সেহেতু পুরূষ আসক্তিশূন্য হয়ে কাজ করলে মোক্ষলাভ করে। – গীতা (৩/১৯)
আজ আমাদের প্রার্থনা- আমরা যেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুকর্ম দ্বারা প্রতিষ্টিত হতে পারি স্বামীজির আদর্শের কণামাত্র হৃদয়ে গ্রহণ করতে পারি।
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment