তৃণার মা বাবার খুবই অভাবের সংসার। তৃণারা তিন ভাই বোন। মা বাবা সারাদিন বাজারে খেটে যেটুকু রোজগার করে সবটুকু বাচ্চাদের পেছনে খরচ হয়ে যায়। সেদিন গ্রামের পার্ক থেকে গিয়েছিলো তৃণা একাই। সামনে একটা ষ্টেসনারী দোকান দেখতে পেল। ওখানে একটা সুন্দর পেন চোখে পড়ল তৃণার। খুব সুন্দর তো পেনটা। ওপরে নকল হীরের মতো একটা পাথর বসানো। ইঙ্কের রংটাও তো বেশ সুন্দর! এটা কিনলে কি রাগ করবে বাবা? পড়াশুনোয় বেশ মন তৃণার। তাই বোধহয় বাবা কিছু বলতেন না। তাহলে কিনব ওটা? দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে জানলো ওটার দাম ১৫ টাকা। কিন্তু তৃণার কাছে তো মোটে ৫ টাকা আছে। কি করবে সে? মাথা নীচু করে গভীর ভেবে সে বললো ‘টাকাটা নিয়ে কালকে আসবো দাদা, পেনটা আমার জন্য রাখবেন কিন্তু’।
সন্ধে গড়িয়ে গেল, দোকানদার শম্ভু তৃণার কথাটা ভোলেনি। এই গ্রামে তো একটাই ষ্টেসনারী দোকান, অনেকেই আসে যায় কিন্তু এরকম একটা মেয়েকে আগে দেখেনি কখনও শম্ভু। পরের দিনও তৃণা এলনা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, সন্ধে হলো তখনো তৃণার দেখা নেই। শম্ভুর মনটা আনচান করছে। বেচারী গরীব মেয়েটাকে বিনামূল্যে দিয়ে দিতে পারতাম পেনটা। হয়তো কেউ ওকে টাকা দেয়নি। কি ইচ্ছে ছিলো ওর পেনটা কেনার। ভাবতে ভাবতেই দেখে তৃণা এসে হাজির। ও বলল ‘অনেক কষ্ট করে টাকা জোগার করেছি। এই পনের টাকা নাও আর আমাকে পেনটা দাও। এটা আমার খুব সখের পেন’। শম্ভু তৃণাকে পেনটা দিয়ে বলল, ‘এই নাও, খুশী তো’? তৃণা খুশী মনে পেনটা নিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।
শম্ভু লক্ষ্য করল মেয়েটার জামায় কেমন লাল লাল ছোপ, মনে হয় রক্তের। শম্ভু ভাবলো, ‘নিশ্চয় আমি ভূল দেখেছি’। মেয়েটির খুশী মুখ চোখ দেখে খুব ভালো লেগেছিলো শম্ভুর। এই সময় দোকানের কর্মচারী তাকে খবরের কাগজটা এনে দিল।
পড়তে পড়তে চোখে পড়ল একটা হেডলাইন, ‘গাড়ীর তলায় চাপা পড়ে একটি মেয়ের মৃত্যু, নাম তৃণা, পকেটে পনেরো টাকা’। শম্ভুর হাত, পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। তাহলে তৃণা টাকাটা আনতে গিয়েই গাড়ী চাপা পড়েছিলো! তাহলে আমি কাকে দেখলাম???
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment