বুক ভরা মধু
মেয়েটাকে দেখতে একেবারে পরীর মতো, এত বড় বড় চোখ, টিকোলো উঁচু নাক, ছোট কপাল আর মাথাভরা রেশমের মতো চুল। হাঁসলে গালে দুটো টোল পড়ে তাতে আরও সুন্দর দেখায় মেয়েটাকে। সামান্তা আমার মেজ ছেলের মাসতুতো শালী। ওরা দুই বোন শার্লি আর সামান্তা একসঙ্গে থাকে। ওদের একটা ভাই আছে, চার্লস ওদের থেকে একটু দূরে থাকে। ওরা আমাদের নেমন্তন্য করেছিলো থ্যাঙ্কসগিভিং ডিনার খেতে ওদের বাড়ীতে কিন্তু আমাদের আর এক জায়গায় নেমন্তন্য ছিল তাই বলেছিলাম পরের দিন ওদের সঙ্গে দেখা করে আসব।
এই তিনটে হতভাগ্য ছেলেমেয়েগুলোর তাদের প্রতিমার মতো মাকে ডিভোর্স করে এদের কৈশোরে পা দেবার আগেই তাদের হারামজাদা বাপ একটি খচ্চর মাগীর পাল্লায় পড়ে। কিছুদিনের মধ্যেই ওদের প্রতিমার মতো মা তিনটি দেবশিশুর মতো সন্তানকে ভগবানের হাতে সমর্পণ করে চিরদিনের মতো পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলো। সামান্তা ছিল তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচাইতে ছোট, তার বয়স ছিলো মাত্র ৪ বছর।
ওদের বাড়ীতে যখন আমরা পৌছলাম তখন সন্ধে হয়ে গেছে। বাড়ীতে দুই বোন, বড় বোন শার্লির স্বামী ডেরিক, ৫ বছরের ছেলে যশুয়া এবং ওদের ঠাকুমা এ্যডালেড থাকে। আমরা পৌঁছাতেই সবাই মিলে আমাদের সাদর অভর্থনা জানাল। সামান্তা আমাকে জড়িয়ে ধরল আমিও তাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে গালে একটি চুমু দিলাম। ওর ঠাকুমা জানালো থ্যাঙ্কসগিভিং এর দিন ডেভিড সামান্তাকে প্রপোজ করেছে। সামান্তা তার বাঁ হাতের রিৎ ফিঙ্গারে ডেভিডের পড়িয়ে দেওয়া জ্বলজ্বলে হীরের আংটি দেখালো আমাকে। আমি প্রাণভরে আশীর্বাদ করলাম তাকে। ঈশ্বরকে মনে মনে ডেকে বললাম ‘ভগবান সূখী করো এদের’।
চারবছর হলো সামান্তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে, চিকিৎসা চলছে। এটা জেনেও যদি কেউ এই হতভাগীকে বিয়ে করতে চায় সে কি প্রণাম পাবার যোগ্য নয়? এখন রেমিশনে আছে। মেয়েটার জন্যে আমার সবসময়েই বুক ফেটে যায়। এত বড় অসুখ থেকে এখন একটু ভালোর দিকে যাচ্ছে কিন্তু মুখে কখনই বেদনার ছাপ দেখিনি।
মাঝে মাঝেই সামান্তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। বেশীরভাগ সময়েই আমার ছেলের বাড়ীতেই। মেজ ছেলের শ্বশুড়বাড়ীর বিরাট গুষ্টি আর মাঝে মাঝেই ছেলে আমার পার্টি দিয়ে থাকে সেখানে সামান্তা সবসময়েই আসে। ও জানে আমি তাকে খুব ভালবাসি, তাই দেখা হলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে এবং আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে তার দুটি গালে দুটি চুমু দিই।
একদিন সুসান মানে মেজ ছেলের বৌ খবর দিল সামান্তা প্রেগন্যান্ট। আমি শুনে খুব খুশী হলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কবে ডিউ ডেট। আরও বলল যে সামান্তা যেহেতু বেবী নয় মাস নিজের পেটে ধরে রাখতে পারবে তাই ভিট্রো ফারটিলাইজেসন থেকে ওদের সারোগেট মাদার ঠিক করে দিয়েছে। এখন মডার্ন যুগে কতরকম সুবিধাজনক ব্যাবস্থা হয়েছে। সময় কেটে যায় নানা কাজে। আমার ছোট ছেলের বৌয়েরও বাচ্ছা হবে তাই বেশ কিছুদিন ব্যাস্ত ছিলাম। তারপর নভেম্বরের মাঝামাঝি লিসা মানে ছোট ছেলের বৌ একটি ফুটফুটে ছেলের জন্ম দিল। আমাদের বাড়ীতে খুশীর বন্যা বইল। ছোট ছেলের বাড়ীতে আমাদের যাতায়াত বেড়ে গেল। তারপরই সংবাদ পেলাম সামান্তার বাচ্চাটি জন্মের কয়েকঘন্টার মধ্যেই মারা গেছে। একটি মেয়ে হয়েছিলো, ওরা ওদের ঠাকুমা যিনি কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন তার নামে নাম রেখেছিলো ‘এ্যডালেড’। খবরটা শুনে আমার বুকের মধ্যে হূহূ করে উঠল। আহা এই দূঃখী মেয়েটাকে আবার দূঃখ দিলে ঠাকুর। এ কেমন বিচার তোমার?
ওরে আমার সোনার পরী,
কোথায় হারিয়ে গেলি?
আমার বুকের ভরা মধু-
একটুও কি খেলি?
তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা,
সবই হলো বৃথা;
কেমন করে বলে দে মা-
বোঝাই আমার ব্যাথা?
In my dream, you came,
And tiptoed with your tiny little cuddly feet;
Along my softly cushioned full bosom-
Left your footprints on,
For me to remember you forever
My little angel for a day!
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment