– কে বহুরূপী নয় বলতে পারিস আয়না?
– সবাই বহুরূপী।
– কিন্তু সবাই যে বলে, তোর সামনে এসে দাঁড়ালে নাকি নিজের সাথে পরিচয় হয়।
– সেটা তুমি সত্যি মনে করো?
– নাহ! আমি চাইলে তোর সামনে রং মেখে সং সেজে আসতে পারি। ভিতরের ঝড়ের ছায়া মুখোশের আড়ালে আড়াল করতে পারি। তোর সামনেই আমি মানুষের তৈরি ঈশ্বরের বহুরূপে আসতে পারি, শুধু নিরাকার হতে পারিনা। নিরাকার ঈশ্বরই একমাত্র নিজেকে জানে। আর নিজেকে জানতে গেলে আমাদেরও নিরাকার হতে হবে যে! কিন্তু তা হওয়ার উপায় তো নেই।
– কেন নেই! একবার চোখ বেঁধে আমার সামনে আয় দেখি।
– চোখ বেঁধে তোমার সামনে আসার কি কোনো প্রয়োজন থাকবে? যদি নিজেকে দেখতেই না পেলাম!
– ঠিক চোখ বেঁধে নিজেকে খোঁজ। দেখ খুঁজে পাস কিনা, নিজেকে চিনতে পারিস কিনা।
– চোখ বন্ধ করে অনেক বার খুঁজেছি, সময়ের সাথে যে আমি বদলাই, তা বুঝেছি। সময়ের সাথে আমার চাহিদা বদলেছে তাও বুঝেছি। কিন্তু তা সবটাই অতীত। কিন্তু ভবিষ্যতে আমি কি চাইবো, আজ যা ভাল লাগে তা ভবিষ্যতেও ভাল লাগবে কিনা, আজ আমার জীবন সম্পর্কে যে ধারণা কাল তা থাকবে না বদলে যাবে, পরিবেশ পরিস্থিতি আমাকে বদলে দেবে কিনা তা জানতে পারিনি। পারিনা। কাল যেটা মনে হত ঠিক, আজ মনে হয় ভুল, কাল যেটা মনে হত ভুল আজ মনে হয় ঠিক। কাল যেটাকে অন্যায় পাপ ভাবতাম, আজ মনে হয় সবটাই ধারণা। সবটাই দৃষ্টিভঙ্গি। সবটাই আপেক্ষিক।
– কিন্তু পাপ….
– হ্যাঁ, পাপ পুণ্য আপেক্ষিক। যে জগতে আমার কিছুই নেই, সেই জগতে পাপ কি আর পুণ্য কি? সবই তো অবিছন্ন প্রক্রিয়া। জীবনে সুখ দুঃখ থাকবেই, মন পাপ পুণ্য ঠিক করে দেয়। মনের বিরুদ্ধে কিছু করাই পাপ। আর সময় মনকে পরিচালনা করে। পরিবেশ পরিস্থিতি অভিজ্ঞতা মনকে সমৃদ্ধ করে। এটাই এক নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।
– ঠিক। সবটাই আপেক্ষিক, সবটাই ধারণা। যেদিন দেহ ছেড়ে নিরাকার হোবি, সেদিন নিজের সাথে পরিচয় পর্ব সম্পূর্ণ হবে।
– হয়ত মৃত্যর পর যদি আত্মা অমর হয়, যদি মৃত্যুর পর নিরাকার ঈশ্বরের সাথে মিলিত হতে পারি, তবেই হয়ত নিজেকে জানার কৌতূহলের অবসান ঘটবে। নিরাকারের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ততদিন এই নিজেকে চেনার প্রক্রিয়া চলুক তবে!!
( সমাপ্ত )
পরিচিতি –
লেখিকা স্থিতা রায়। জন্ম ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৮৪ সালের কলকাতায়। পিতা অচিন্ত্য রাউত, মাতা অঞ্জনা রাউত। কাশীপুর সেন্ট নিনিয়ান্স হাই স্কুল ফর গার্লস থেকে মাধ্যমিক পাশের পর, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেন। এরপর রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটি থেকে সোশ্যাল ওয়ার্কে ২০১০ সালে এম. এ. পাশ করেন। কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি নিজেরই স্কুলের প্রাইমারি বিভাগে দুবছর শিক্ষকতা, এম এ পাশ করার সাথে সাথেই বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় যোগদান। বর্তমানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় প্রশিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত। বার্ণিক থেকে কবিতা গ্রন্থ “মন ছুঁতে চেয়ে”, গল্পগ্রন্থ “ভার্জিনিটি” ও কবিতা গ্রন্থ “শাওনে সিক্ত দুজনে” প্রকাশিত। আগামী বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশন থেকে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হবে “হৃদয় এক্সপ্রেস”।
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment