গত শনিবারে গিয়েছিলুম বিয়ের নেমন্তন্য খেতে
সে অনেক দূর, প্রায় দেড়ঘণ্টা লাগে যেতে।
সকাল থেকেই কাজের তাড়া,
রান্নাবান্না বাজার দোকান, সবই এইটুকু সময়ের মধ্যে সারা।
শনি, রবি এই দুটো দিনই তো মোটে,
এদেশে আমাদের কপালে ছুটি জোটে।
এদিকে সকাল দশটা থেকেই তাড়া লাগাচ্ছেন আমার উনি,
যদিও নিজে টিভির সামনে বসে পিণ্ডি চট্কাচ্ছেন বুশ ও ডিক্ চেনি।
‘তাড়াতাড়ি করো তাড়াতাড়ি করো তিনটের মধ্যে রেডি হয়ো তুমি’
ছেলের ওপরেও চলেছে সমান তালে একই ধম্কানি।
সব কাজ সারতেই বেজে গেল বেলা দুটো,
এখনো ব্রেকফাশ্ট খাইনি, কি আর করি ভাতই খেয়ে নিলুম একমুঠো।
এরপরই স্নান ও সাজগোজের পালা, খুলে বসলাম শাড়ী ব্লাউজের ডালা,
কোন্টা ছেড়ে যে কোন্টা পরি কিছুতেই বুঝতে পারিনা-কি জ্বালা।
ভাগ্যিস্ আগের দিন কাজ থেকে ফিরে,
চুলের কালার করাটা রেখেছিলেম সেরে,
রেসের ঘোড়ার চেয়েও জোরে, ভূরু টুরু প্লাক করে
মেকাপ্ ও শাড়ী গহণা পরে,
যখন গাড়ীতে উঠলুম তখন বাজে প্রায় পৌনে তিনটে,
বিয়ে শুরু সাড়ে চারটে।
রাস্তায় বেজায় ভীড়,
সামারের দুপূর রোদ ঝল্মল্ সবাই ছেড়েছে তাদের নীড়।
আচ্ছা এত কি দরকার ছিল তোদের আজই সব যাওয়ার বীচে?
গাদা গাদা জিনিষ আর বাইক বেঁধে গাড়ীর পিছে-
সারাটা রাস্তা শ’য়ে শ’য়ে গাড়ী, নড়েনা কেউই সহজে এত তাড়াতাড়ি।
এত কাণ্ড করেও বিয়েটা করে গেলুম মিস্, ঈশ্
যা রাগ ধরছিল না রাস্তার লোকেদের ওপর-
মনে হয় মারি ওদের দুই গালে দুই থাপ্পর।
যাক্, দঃখিত মনে বেশী করে খেয়ে নিলুম স্ন্যাক।
এরপর, দেঁতো হাঁসি ও খাজুরে আলাপ শেষ হলে,
আমরা সকলে ঢুকলাম মেইন হ’লে।
সেখানে, প্রথমে শুরু হল পাত্র পাত্রীর প্রশস্থ গাওনা, পরে চলে গুণবর্ননা
তাদের বাবা, মা, দাদু, দিদা, মাসি, পিসি, পাড়াপড়শী, খূড়ো, জ্যাঠা, কাকী,
কাকা, বড়মা, ছোটমা, রাঙামা, সোনামা, রানীমা ও আলুমার।
এরপর, পঞ্চোশোর্ধ বুড়োবুড়ী, থুরি (মাপ করবেন) ভদ্রমহোদয়গনের নাচ,
ফক্সট্রট ও ওয়াল্টজের সাথে হিন্দি ছবির ‘আও মেরে লাজ’
এর অপূর্ব্ব সমন্বয় দেখে ছেলেমেয়েরা কি গেল চম্কে?
নাঃ এতদিনে তারাও চিনে গেছে তাদের বাবা মাকে।
সুতরাং সব মিলিয়ে তালে গোলে, জোর বাজনা ও নাচ গান চলে।
এদিকে আমার উনি ডাক্ছেন হাতছানি দিয়ে,
‘এসো নাচবে এসো’ কিন্তু আমি বাবা যাচ্ছিনা ওদিকে পা বাড়িয়ে।
দুই নেমন্তন্য আগে, প্রাণে কিঞ্চিৎ সাধ জাগে-
উঠেছিলুম ডায়াসে, নাচবারই প্রয়াসে,
কিন্তু যত বলি তাকে, মাটিতে পা ফেলো তালের ফাঁকে ফাঁকে-
দিওনা আমাকে মাড়িয়ে, তবু কোনো কথা কি যায় কান দিয়ে?
অতঃপর, আমার দুই পায়ের পাতার ওপর-
ভুঁড়ি ও গোঁফজোড়া শুদ্ধু তিনমন ওজনের ভর সইতে না পেরে,
হিলতোলা জুতো শুদ্ধু উল্টে গেলাম পড়ে,
ঝক্ঝকে সেই ওয়্যাক্স করা ড্যান্স ফ্লোরে।
দুদিন অফিস হলো কামাই, সেই থেকে ভাই
প্রমিস করেছি ইনি যতই করুন ধানাই পানাই, আমি আর ও রাস্তায় নাই।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব্ব মিটিয়ে, সবার কাছে বিদায় নিয়ে
যখন বাড়ীমুখো রওনা দিলাম তখন রাত ঢের, প্রায় দেড়।
রাস্তায় বাপ ছেলে দুজনেই চুপ্চাপ্ শান্ত,
মনে হয় বকে বকে হয়ে পড়েছে ক্লান্ত,
না হলে দুজনেই কথা বলে অনন্ত।
মনে পড়ে গেল ছেলেবেলাকার সেই গান, ‘দূরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে টান’
যাতে বাঁধা পড়েছে আমাদের সকলের প্রাণ।
চাকা ঘুরে চলেছে সাঁই সাঁই সাঁই,
আমরাও সাথে সাথে ছুটে চলেছি বাঁই বাঁই বাঁই,
শক্ত হাতে চাকা ধরে রেখেছি সবাই-
জানি একবার হাত ছেড়ে গিয়ে যদি ছিট্কাই-
তবে আঁত্মারামটি খাঁচছাড়া হবেই-
কিংবা
আঁত্মারামটি হয়তো খাঁচছাড়া হয়ে গেছে কবেই-
জানিতেও পারি নাই।
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment