এক ভীষণ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের ১৪০ কোটি মানুষ । কি অসহায় ভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে আজ – আর যারা বেঁচে আছে তারাও কি অসহায়, আতঙ্কিত ভাবে বেচে আছে । Systemic collapse-এর মর্মান্তিক জ্যান্ত ছবি জ্ঞানত দেখিনি, হয়ত মর্মান্তিকতার শেষ দেখা এখনও বাকী । ভগবান বলে কেউ থাকলে আজ মনে হয় সেও খুব অসহায় । ভারতের জনঘনত্ব, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সার্বিক শিক্ষা ও সচেতনতা অনুমান করে গত বছরের মাঝামাঝি এমন একটা কিছু ঘটবে বলে আমার মনে হয়েছিল কিন্তু সেটা ভালোয়-মন্দে উতরে যাবার পর ২০২১-এর এপ্রিলের শেষের দিকে হঠাৎ এমন মরণ spike হবে, বাঁচার অক্সিজেন পাওয়া যাবে না, 24×7 চিতার আগুন জ্বলবে সারা দেশে এটা বোধহয় অধিকাংশেই ঠাওর করতে পারেনি । আজ অবশ্য এই অতিমারীর কারণ খুজতে আতস কাঁচ লাগবে না । রাজনীতিক নেতা-নেত্রীদের মিছিলে মাস্কের বালাই না রেখে যোগ দেওয়া সাধারণ মানুষের অপদার্থতা । নেতা-নেত্রীদের করোণা হলে হাসপাতালের বেড বা অক্সিজেন বা ভেন্টিলেশনের অভাব হবে না কিন্তু সাধারণ মানুষের হবে,তাই এটা আমাদের অপদার্থতা – আগুনে হাত দিলে হাত তো পুড়বেই। করোণার মার্কেটে শিমলা-মানালি ঘুরতে গেলে boredom কাটে কিন্তু জীবন থাকলে না পরের বার পরিবার নিয়ে ঘোরা যাবে ! অন্ধ ধর্ম যুগযুগান্ত ধরে মানুষকে অন্ধই করেছে, ধর্মের দোহাই দিয়ে বা বুজরুকি করে মুক্তি পেলে তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর দেশে এই মহামারণ কেন ! অন্ধ ধার্মিক জ্যোতিষ বাবা-মা রা করোণা মা কে বশে আনতে না পেরে তাই আজকাল অন্ লাইনে ঢপ দিচ্ছেন রোজগারের জন্য । তবে কিছু মানুষকে বেরুতেই হয়েছে ও হবে কারণ করোণার থেকেও পেটের জ্বালা অনেক বেশী। অন্ লাইনে তো আর ট্যাক্সি বা রিক্সা চালানো যায় না। আর টিকা তৈরির আতুরঘর যে দেশ সে দেশে দেশের সব মানুষদের টীকাকরণের end-to-end planning, production, distribution আর implementation plan এর যে অভাব আছে সেটা transparently ফুটে উঠেছে। টিভির খুপচিতে গলার শীড়া ফুলিয়ে তারস্বরে চেঁচিয়ে তর্কবাগীশ হিসেবে প্রমাণ করলেই স্যত্যি বলা হয় না । সত্যিটা আজ বড্ড কঠোর ভাবে দেশের সামনে ফুটে উঠেছে । এখন অন্তত ভাটের রাজনীতি না করে দেশের মানুষের আর্তিটা শুনুন সবাই । শোনার অভ্যেরটা আজ মানুষের প্রায় চলেই গেছে। Ego ছেড়ে, শুনে-বুঝে emergency basis এ কাজ করার সময় এটা – এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে।
অন্যের বদনাম করার ইচ্ছেটা প্রথমেই চলে আসে,সেটা তো নয় উগরে দিলাম। এবার কিছু কাজ করার কথা বলা যাক। রাজনীতিবিদরা, তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই হোক আর যে কারণেই হোক এবার অনেকটা উঠে পরে লেগেছে করোণা মোকাবিলার জন্য। তবে অতিমারীর ব্যাপারে তারা কোনো মহারথী নয় – ক্ষমতার মাপকাঠি ছাড়া। তারাও এমন দুদর্শা জন্মে দেখেনি । এই মহাযুদ্ধ জয়ে আবারও তাই সত্যিকারের Hero-দেরই লাগবে– ডাক্তার, নার্স, টীকা আবিষ্কারক, trial volunteer আর সেই সমস্ত মানুষরা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে করোণা আক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের অসাধারণত্ব ও খুব দরকার। যেমন গুজরাতের এক বৃদ্ধ দম্পতি তাদের একমাত্র ছেলেকে হারাবার পর তাদের সন্চয়ের একটা বড় অংশ দান
করেছেন করোণা তহবিলে এবং তাঁদের গাড়ীটিকে দান করেছেন এম্বুল্যান্স হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। বা বাংলায় IT তে কর্মরতা একটি মেয়ে ও তার বাবা-মা মিলে করোণা আক্রান্ত শ-খানেক মানুষকে প্রতিদিন খাবার জোগাচ্ছেন। ১৪০ কোটির দেশের প্রয়োজনের তুলনায় এ হয়ত অতি অতি ক্ষুদ্র কিন্তু যদি আমরা সবাই আজ একটু বেশী সচেতন, অনেকটা বেশী মানবিক আর একটু কম স্বার্থপর হয়ে নিজের ক্ষমতা আর ইচ্ছে মত বিন্দু বিন্দু করে শেয়ার করি সিন্ধুর অনেকটাই সমস্যা লাঘব করতে পারব। নামি শিল্পপতিরা বা বলিউড স্টার রা কত টাকা দিচ্ছে সেটা বড় কথা নয় – আমি কি করছি সেটা বড় প্রশ্ন। অবশ্যই আমার সাধ্য সীমিত কিন্তু মন টাকে সীমিত না করে নিজেকে জিজ্ঞাসা করি আমি কি করতে পারি। নিশ্চয় কিছু করতে পারি – সেটা কি? আসুন আমরা সবাই কিছু করি। যদি কিছুই না পারি অন্তত একটু দায়িত্বশীল হই ও একটু বেশী ধৈর্য্য দেখাই। যেমন ভীষন প্রয়োজন না থাকলে আবার কিছুদিন গৃহবন্দী থাকি, boredom-এর কথা আজ মাথায় আসলে নিজেকে বিকৃতমনষ্ক ভাবি, মাস্ক না পরে বাইরে বেরুলে নিজের মুখেই নিজে সজোড়ে দুটো আঘাত করি যাতে পরে মনে থাকে। কোনোরকম negative information যেন whatapp-এ শেয়ার না করি, facebook-এর সঙ্গ ছাড়তে না পারলে কারুর বিবাহ বার্ষিকি তে বর-বউ এর মধ্যে পিঁয়াজি মার্কা ভালোবাসার কথায় লাইক না দিই বরং তাদের উৎসাহ দিই যারা আজ সমাজে real hero-র কাজ করছে, তা সে যত ছোটো বা বড়ই হোক।
আজকের চরম সঙ্কটের দিনেও আশার বড় প্রয়োজন। দেশের এই দুর্দশায় সবাই এক হয়ে দাঁড়ালে করোণা নিশ্চয় নাশ হবে। হয়ত কয়েক লক্ষ মানুষ ততদিনে আমাদের মধ্যে আর থাকবে না, হয়ত আমি থাকব না কিন্তু পৃথিবীর জীবন আবার স্বাভাবিক হবে। জীবনের সব কিছুই তো সাময়িক, করোণা তবে ব্যতিক্রম হবে কেন ! তবে সেই সময়টা আর কত দিন বা মাস সেটা সঠিক জানা নেই কারুর। আমাদের আর ও ধৈর্য্য, উদারতা ও আশার বড্ড দরকার। করোণার মাঝেও আজ রবীন্দ্র জয়ন্তী দরকার – হোক না একান্তে, নিজের ঘরে
“সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা,
কহ কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গল বারতা । ”
সুমন কুমার চন্দ্র
(লেখকঃ ম্যানেজমে্ন্ট কনসালট্যান্ট , আমেরিকার নিউ জার্সির বাসিন্দা)
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment