কত দূর স্বপ্নের বাস্তব(স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কিত)
‘ ভালো লাগে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে,ভালো লাগে ঐ আকাশের তারা গুনতে,ভালো লাগে মেঘলা দিনে নিষ্পলকে রামধনু খুঁজতে..’ সত্যি, আমাদের ভালো লাগা আর স্বপ্নের জাল বোনার তালিকাটা বড্ড দীর্ঘ,বড্ড বেশী।কিন্তু যখন এই স্বপ্নরা কিছুটা হলেও বাস্তবে এসে ধরা দেয়,তখন যারপরনাই খুশি হই।গেয়ে উঠি, ‘ আহা কি আনন্দ আকাশে – বাতাসে ‘ কিংবা ‘ কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা ‘। এতো গেল নিজস্ব কিছু স্বপ্নের কথা যা একান্তই ব্যক্তিগত।কিন্তু কথায় আছে, ‘ পুষ্প আপনার জন্য ফুটে না,পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও ‘ ।তাই স্বপ্নটা যদি বড় হয় মানে যে স্বপ্ন শুধু নিজের জন্য নয়,গোটা দেশবাসী,পৃথিবীবাসী নিদেনপক্ষে রাজ্যবাসীর জন্য হয়,তবে মন্দ কী —- তাকে বাস্তবে রূপ দিতে।
এরকমই এক স্বপ্নময় সুন্দর দেশের কথা ভেবেছিলেন স্বামীজি।তিনি আহ্বান দিয়েছিলেন, ‘ হে বীর, সাহস অবলম্বন করো ‘।
যে দেশের বীর সন্ন্যাসী ইশ্বরকে খুঁজে পেলেন মানুষের মাঝে আর মানব সেবার মাধ্যমে দেখলেন ইশ্বর সেবার পথ।সেই দেশেই ইশ্বরের নামে অর্থের প্রাচুর্যতা ভুলে গেছে আকাশের নিচে বাস করা অভুক্ত – আদুল গায়ের হাজার হাজার মানুষের ব্যথা।যাদের জন্য একদিন বিবেকানন্দের মন কেঁদেছিল।
তাঁর গর্বের একদল ‘ সবার ওপরে মানুষ ‘ আজ বিবেকবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে ভোগ – বিলাস – সুখ – স্বাচ্ছন্দ্য – ঐশ্বর্য্যের মোহে মাটির দিকে তাকায় না।আজ বড় স্বার্থপর মানুষ। ‘ আমি ‘ – র যাঁতাকলে আবদ্ধ মানুষ।
যে যুবসমাজের ওপর স্বপ্নের সুন্দর ভারত গড়ার আস্থা রেখেছিলেন স্বয়ং বিবেকানন্দ,সেই যুবসমাজ আজ উচ্চাশা পূরণে ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে।শুধু নিজেকে খুশি করতে।
আজ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে মানুষ।স্লাইড শো,পথ নাটিকা,সভা – সমাবেশ ——কি হয় না কুসংস্কার দূর করতে।তবুও, কুসংস্কারের গণ্ডি থেকে আমরা আজও বেরোতে পারিনি।
জাতির পিছিয়ে পড়ার কারণে অশিক্ষাকে দায়ী করেছিলেন স্বামীজি।শিক্ষার উন্নতি হলেও আজও একটা বিশাল সমাজ অশিক্ষার অন্ধকারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।শিক্ষার অগ্রগতিতে আজকের তরুণীরা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে,পোলিও টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করেছে দ্বারে দ্বারে ঘুরে মায়েদের বুঝিয়ে,উচ্চশিক্ষার পথে হয়েছে অগ্রসর।চেনা ছন্দের বাইরে পা রেখেছে এভারেস্টের চূড়ায় কিংবা মহাকাশে কিংবা খেলার মাঠে বিভিন্নভাবে
আজ নতুন স্বপ্নের বাস্তবের পথে অনেকখানি এগিয়ে তরুণীরা।তারা যেমন একদিকে ঘর – সংসার, স্বামী – সন্তান সামলায়, তেমনি বাইরের জগতেও তাদের অবাধ বিচরণ।
তবুও দুঃখের সাথে বলতে হয় অনেক কিছুতেই তরুণীরা সফল হলেও,আজও পথে – ঘাটে মেয়েরা নিরাপদ নয়।পথে পথে চলে গণধর্ষণ।যে ঘটনায় তার বুক শিউরে ওঠে,যন্ত্রণায় মুখ হয় ভয়ার্ত আর বলি হতে হয় কত সদ্য ফোটা ফুলের মত তরুণীকে।আজও পণের অজুহাতে বধূ নির্যাতন,বধূ হত্যার মত জঘন্য কাজ হয়ে চলেছে।
তাই প্রশ্ন জাগে মনে,আমরা কি সত্যি – ই শিক্ষিত হয়েছি?কত দূর আমাদের স্বপ্নের বাস্তব।
জানিনা আগত দিনের কোন কর্মসূচি আমাদের দেখাবে সঠিক দিশা।তবু,তাঁর মত আমরাও আশাহত হব না।আজও যে তাঁর আদর্শ যুবসমাজের কাছে সঞ্জীবনী মন্ত্র।অপেক্ষা করবো,কবে ‘ ভারত আবার উঠবে, জড়ের শক্তিতে নয়, চৈতন্যের শক্তিতে ‘।
শিউলী জানা
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment