আবার পুজো আসছে।পুরোনো ব্যাপার কিন্তু বাঙালীর কাছে প্রত্যেক বছর দুর্গা পুজো আসা কোনো পুরোনো ব্যাপার নয়।বরং প্রত্যেক পুজোই যেন নতুন করে আসে – পুরোনো বছর, পুরোনো কষ্ট, সব কিছু পুরোনোকে ভুলে যেন নতুন শক্তি, নতুন আনন্দ, নতুন উত্তেজনার সাথে পুজো আসে – প্রত্যেক বছর।অনেক বছর আগে খবরের কাগজে পড়েছিলাম মা দুর্গা যদি পাঁচ বছর অন্তর একবার আসতো তাহলে বোধহয় অনেকের, আনন্দ না বাড়লেও,দুঃখ একটু কম হত।সেই অনেকের মধ্যে পড়ে তারা যারা পুজোয় নতুন জামা-কাপড় পায় না, যাদের কাছে পুজো কোনো নতুন রং আনে না, যাদের কাছে পুজো কোনো আলাদা দিন নয়।তবে উল্টো যুক্তিরও তো খামতি নেই।যেমন উল্টোদিকের যুক্তি পুজোয় ১৫,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে গতবছর শুধু পশ্চিমবঙ্গেই।বহুহাজার দরিদ্র মানুষও বিভিন্ন ভাবে দু-চার পয়সা রোজগার করেছে পুজোর জন্যই।মা দুগ্গা যদি ড্যাং-ড্যাং করে না আসত তবে সেই দু-চার পয়সা কি তাদের জুটতো! নতুন জামা না জুটুক, দু-চার দিনের খাবার তো জুটছে।তো একথা মানতেই হয় পুজো প্রত্যেক বছর আসা সর্বসাকুল্যে ভালোই। অন্ধ ধর্মের ধ্বজা নিয়ে না এসে যদি উৎসব,আনন্দ, সবার মিলন,খুশী এসবের জন্য আসে তো আরো ভালো।বাঙালীর দুর্গা পুজো উৎসবের র্র্যাংকিং-য়ে পৃথিবীতে আজ কোথায় তা জানি না তবে বেশ ওপরের দিকেই হবে মনে হয়।ধর্ম-জাত-পাতের উর্ধ্বে উঠে যদি দুর্গা পুজোয় বাঙালী-অবাঙালী-ভারতীয়-অভারতীয় সবাই সামিল হয় তাহলে নিঃসন্দেহে তা সার্বজনীন উৎসব হিসেবে আরও বেশী স্বীকৃত হবে।
এই দীর্ঘ ভূমিকার কারণ এ বছরের দুগ্গাপুজো।২০২০-র শুরু থেকে করোণা কাকুর (বা কাকিমার) কৃপায় সারা পৃথিবীর প্রায় সমস্ত পার্থিব ব্যাপার বিধ্বস্ত।গত ৮-১০ মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বিষয় – ব্যবসা-বানিজ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, খেলা-ধূলা, জীবন-যাত্রা, এমনকী ধর্ম-টর্মও মুখ তুলে ওপরে তাকাতে পারছে না। সব কিছুর কোমড় ভাঙ্গা – ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাস্ এমন জ্ঞানী-গুনীতে ভরা বিশাল পৃথিবীতে এভাবে এতদিন দাপটে শাসন করবে সে ছিল ধারনার অতীত। সবাই আমরা অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছি অনিশ্চিত আশার দিকে।সেই মার্কেটে আসছে দুগ্গা মা।টাইমিং টা একটু গোলমেলে কিন্তু আর কত দিনই বা Postpone করা যায়। অক্টোবরের শেষ দিকেও যদি মা না আসে তবে কবেই বা আসবে।এরপর শীত পরে যাবে, তারপর বছর শেষ হয়ে যাবে আর মা তার ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ী আসবে না তা কি হয়।তবে মা জানি না তুমি কতটা গ্লোবাল নিউজ্ ফলো করছো, তাই কয়েকটা স্ট্যাটস্ দিই। সারা পৃথিবীতে সাড়ে তিন কোটির ওপর মানুষ আক্রান্ত, ১০ লক্ষের ওপর শহীদ হয়েছে। যদি ভাবো তোমার focus area শুধু ভারত তাহলে বলি এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষের ওপর আক্রান্ত আর লক্ষাধিক মারা গেছে।মৃত্যুর তালিকায় ভারতের র্র্যাংকিং জনসংখ্যার র্র্যাংকিং ধরে রেখেছে, দ্বিতীয়।তাও এসব Official সংখ্যা, আসল সংখ্যাটা কত তা তুমি জানবে – তুমি অন্তর্যামী।যদি death curve টা দেখ, দেখবে একদম transistor-এর compute power- এর মতো – exponential graph।আর যদি তুমিও localized হয়ে শুধু বাংলার কথা ভাবো তার পরিসংখ্যানও কোনো আশার আলো জাগায় না। আর তুমি তো জানো তোমার পুজো কিন্তু আজ গ্লোবাল। আমি সিডনির দুর্গা মন্দির বা নিউজার্সির ভরত সেবাশ্রমে অষ্টমীর পুজোয় দেখেছি – ভীড় দেখে বুঝিনি কোথায় আছি। Popularity-র বিচারে তোমার TRP চড়চড় করে ওপরে উঠছে কিন্তু শুনেছি ‘With power comes responsibility’। তুমি তো জানো বাঙালী কেমন হুজুগে। তুমি তো জানো ধর্ম কতো অন্ধ। আর তোমায় কি বলব রাজনীতির নেতা-নেত্রীদের উদ্দেশ্য। শুধু এটুকু বলি করোনার কিন্তু কোনো টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি।পুজো আসছে বলে করোনা কিন্তু হাইবারনেশনে যাবে না।দেশের স্বাস্থ্যব্যাবস্থা কিন্তু অলরেডি কোমায় চলে গেছে।অর্থনীতি লুঙ্গি পরে শীর্ষাসনরত।মানুষের হাতে নেই পয়সা, মনে নেই ভরসা।খালি পেটে যেমন ধম্ম হয় না, খালি পকেটে কেউ জ্ঞানও শুনবে না।এমন অবস্থায় হুজুগে পরে, জাস্ট হুজুগে পরে, লক্ষ কোটি লোক দুগ্গাপুজো বলে হা-রে-রে-রে-রে-রে-রে করে পুজোয় বেরুবে একটু ফুর্তি-আনন্দ করতে। সবার উদ্দেশ্য তুমি না হলেও তোমাকে ঘিরেই এই জনস্রোত হবে। Social distancing, মাস্ক, স্যানিটাইজিং এসব কে বুড়ো আঙুল দেখানো সোজা কিন্তু ক্যাওরা টা সেখানেই। বাঁচানোর কিন্তু কেউ নেই, I mean কেউই নেই।তোমাকে অনেকে দেবতা বলে মানে।তারা মনে করে দেবতারা নাকি সব ক্ষমতার অধিকারী – যদি তাই-ই হয় এই লক্ষ কোটি অন্ধ মানুষগুলোকে বাঁচিও। এবারের পুজো কিন্তু তোমার করোণা পরীক্ষা মা।ভালো থেকো। Welcome and Have a Safe Trip মা।
সুমন কুমার চন্দ্র
(লেখকঃ ম্যানেজমে্ন্ট কনসালট্যান্ট , আমেরিকার নিউ জার্সির বাসিন্দা)
Comments »
No comments yet.
RSS feed for comments on this post. TrackBack URL
Leave a comment