আদৌ কি মানুষ ভালো আছে?

ছোটোবেলা থেকেই শুনেছি গ্রামের মানুষের সাথে শহরের মানুষের পার্থক্যটা অনেকটাই । তবে এখন সময় পেলে খুব ভাবনা আসে, আমরা কেমন যেন একটা খাঁচার মধ্যে বদ্ধ, শহরের মানুষ হোক আর গ্রামের আত্মটা তো একই । তাদেরও তো মন যায় সারাদিনের ক্লান্ত জীবন পেরিয়ে একটু সেইসব মানুষ সাথে মিশি যাদের সাথে কথা বললে আনন্দ মিলবে। ঠিক সেইরকম গ্রামের মানুষজন ওভাবে তবে আজকাল গ্রাম থেকেও কেমন যেন আন্তরিকতা দূরে যাচ্ছে, সেখানে আজকাল কেউ আর বিকেল বেলা খেলতে বেরোই না, বিকেল বেলা গল্পের আসর বসেনা, বাচ্চারা এপাড়া থেকে ওপাড়া লুকোচুরি খেলেনা, কাকের সারি চিৎকার করে করে গেলেও তাদের মধ্যে থেকে যেন উল্লাসের চিৎকার আর বেরোয় না, তারাও জানিনা যেন আতঙ্কে থাকে? শহরেরে মানুষের আদব কায়দা তারাও যেন অনুকরন করে চলেছে । আর এদিকে শহরের মানুষ সাহেবিয়ানাতে আসক্ত হচ্চে দিনের পর দিন । মধ্যা কথা হচ্ছ ‘মানুষ কি ভালো আছে’?আদৌ কি ভালোবাসা বলে জিনিসটা, সহানুভূতি, অন্যের খারাপ পরিস্থিতিতে পাশে দাড়ানোর ইচ্ছেটা অদৌ কি বিরাজমান ? নাকি এইসবের পরিবর্তে শুধুই আজ বিরাজমান হিংসা ।

বিরাজমান আর কিভাবে অন্যজনকে হারানো যায় সর্বদা সেই দিয়ে চলে চিন্তা । বর্তমানে নিষ্পাপ শিশুরা পরিচিত নয় মানুষের সাথে তাইতো বেশিরভাগ পরিবারে সদস্য সংখ্যা২-৩ সকলেই আজ ছন্ন ছাড়া । যাইহোক সকলেই আজ স্বার্থপরতার স্বীকার চাইলেও দূরে যেতে পারে না । আজকাল চায়ের দোকানের আড্ডার সদস্য সংখ্যা কমে প্রায় শূন্যের দিকে কিন্তু অনলাইন ব্যবস্থা এবং ফোনের মতো যন্ত্রটাই যেনো সকলের প্রিয় বাড়ি । তবে রাত শেষে ক্লান্ত পথিকেরা যখন এই ‘বাড়ি’ খুলতে যায় তখন নিশ্চয় তাদের একবারটি হলেও তাদের অতীতের দিনগুলো মনে পরে যায় । আজকাল মানুষের চাপ বেড়েছে যাকে সবাই নাম দিয়েছে ‘ডিপ্রেশন’ । এই অবস্থার শিকার হয়ে কত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে শুধুমাত্র নিজেদেরকে আধুনিকতার চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং এক গুয়েটার মধ্যে কাটিয়ে যেন নিজেদের খারাপ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুজে না পেয়ে আত্মহত্যার পথে গিয়েই তারা নিজেদেরকে শ্রেয় ভাবে । তার দুঃখে দু-তিন দিন সাকলে মাআমাতি করলেও এক সপ্তাহ পর সকলেই তাকে ভুলে গিয়ে নিজের ছন্দে ফিরে আসে । এই তো চারিদিকের হাওয়া দূষণের রঙে পৃথিবী রাঙায়িত হচ্ছে দিনের পর দিন । তা হচ্ছে অবশ্যই শিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত সকল মানুষের হস্তক্ষেপে । লোভনীয় মাপকাঠি আজ শীর্ষে পৌঁছে যাওয়ার জন্যই তো পরিবেশের এই অবস্থা ।

বরফ গলন থেকে শুরু করে বর্ষার দেরিতে আগমন সব পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে আধুনিক যুগের শিক্ষিত প্রাণী ‘মানুষ’ ! আজকাল সকলের ব্যস্তগরা জীবনে কেউ খুব একটা ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেই না নইলে হয়তো বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো পরিস্থিতির স্বীকার আমাদের হতে হতো না । তবে কথাটা সত্যি হলেও আমরা জানি আংটি পরা শিক্ষিত মানুষেরেই স্বচ্ছন্দ্য করতে গিয়ে বেশিরভাগ দূষণ ডেকে আনে । তবে আমরাক্ষ সকলেই একটা কিছু না বুঝে দোষারোপ করি মাথার উপর ‘ভগবান’ কে । আজকাল ভগবানকে ডাকার ক্ষেত্রেও মানুষের মধ্যে যেন শ্রদ্ধা, ভক্তি উড়েগিয়ে চলে এসেছে বাহুল্য ও দেখনদারি । এই ভাবেই মাতছে মানুষ নিজেদের আমেজতে । আজকাল বাচ্চদের জীবনে নেই কোনো খোলা খুলি কেলার জায়গা। আজকাল সকাল হলেই তারা বয়ে নিয়ে যায় ব্যাগ ভর্তী বই যার ওজন হয়তো বাচ্চাগুলোর ওজনের দ্বীগুন । স্কুল থেকে ফেরার সময় হয়তো তাদের আর কোনোই এনার্জী থাকে না। এই ভাবেই তারা নিজেদের জীবনকে ব্যস্ত করছে। সর্বশেষে বলা যেতেই পারে এত স্বাচ্ছন্দ এত বিলাসিতা থাকা সত্ত্বেও মানুষ যেন গুমড়ে গুমড়ে মরছে যা প্রকাশের জায়গা আজ বিলুপ্তির পথে। অর্থাৎ কোনো মানুষ নেই যে আপনার সব কথা শুনবে যে আপনার দুঃখের, সুখের মুহূর্তের ভাগিদার হবে

যে আপনার দুঃখগুলো এককাপ চায়ের পাত্রে ডুবিয়ে সব কথা বের করে নেবে বরং সোশ্যালমিডিয়ায় আপনাকে এককাপ চায়ের ছবি পাঠিয়ে ব্যস্ততা দেখাবে ঠিক যেমন জন্মদিনের আশির্বাদের পরিবর্তে হাজারো মানুষের জন্মদিনের শুভেচ্ছা আমাদের ভরিয়ে দেয় । যেকানে অতীতে তৈরী করা মায়ের হাতের তৈরী পায়েস আজ যেন শুধুই পুরানো কালের স্মৃতি । এইভাবেই আজকাল আমার আপনার সবারিরি জীবন নিজের ছন্দে চলছে । যেখান থেকে আমি আপনি বেরোতে চাইলেও পারবোনা । এই ভাবেই আমাদের জীবন চলছে, তবে শেষে আবারও বলতে চাই ‘আদৌ কি মানুষ ভালো আছে’ ?